Thorium The sustainable and safe fuel of the future. থোরিয়াম ভবিষ্যতের টেকসই ও নিরাপদ জ্বালানি।
🔸 ভূমিকা
বর্তমান বিশ্বে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, শিল্পায়ন এবং প্রযুক্তির প্রসারের ফলে শক্তির চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই চাহিদা পূরণের জন্য আমরা এখনো অনেকাংশে নির্ভর করি জীবাশ্ম জ্বালানির উপর, যার ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণের মতো গুরুতর সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে, বিজ্ঞানীরা নতুন, পরিবেশবান্ধব ও টেকসই জ্বালানির উৎসের সন্ধানে রয়েছেন। থোরিয়াম একটি এমনই সম্ভাবনাময় পারমাণবিক জ্বালানি, যা ভবিষ্যতে বৈশ্বিক শক্তি সমস্যার কার্যকর সমাধান হতে পারে।
🔸থোরিয়াম কী?
থোরিয়াম একটি প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া রেডিওঅ্যাকটিভ মৌলিক উপাদান যার পারমাণবিক নম্বর ৯০ এবং প্রতীক Th। এটি নরম রুপালী ধাতুর মতো এবং ইউরেনিয়ামের মতোই পারমাণবিক জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী। পৃথিবীর ভূত্বকে থোরিয়াম ইউরেনিয়ামের চেয়ে ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়, বিশেষত ভারতে, অস্ট্রেলিয়ায়, চীনে এবং নরওয়েতে এর প্রচুর মজুত রয়েছে।
🔸থোরিয়াম বনাম ইউরেনিয়াম
পারমাণবিক জ্বালানির ক্ষেত্রে ইউরেনিয়াম বর্তমানে সবচেয়ে ব্যবহৃত উপাদান হলেও থোরিয়াম তার একটি কার্যকর বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। নিচের তুলনাটি এই দুই উপাদানের কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দেয়:
🔸বৈশিষ্ট্য ইউরেনিয়াম থোরিয়াম
▫️মজুত সীমিত প্রচুর
▫️তেজস্ক্রিয় বর্জ্য বেশি কম
▫️অস্ত্র তৈরির ঝুঁকি বেশি প্রায় নেই
▫️জ্বালানি দক্ষতা সীমিত বেশি
▫️নিরাপত্তা ঝুঁকি তুলনামূলক ▫️বেশি তুলনামূলক কম
🔸থোরিয়াম-চালিত রিঅ্যাক্টর
থোরিয়াম নিজে থেকে সরাসরি ফিশন রিঅ্যাকশনে অংশ নিতে পারে না, তবে এটি ইউরেনিয়াম-২৩৩ তে রূপান্তরিত হয়ে শক্তি উৎপন্ন করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় তুলনামূলকভাবে কম তাপমাত্রা ও কম চাপের প্রয়োজন হয়, যা থোরিয়াম রিঅ্যাক্টরকে আরও নিরাপদ করে তোলে। বিশেষত লিকুইড ফ্লুরাইড থোরিয়াম রিঅ্যাক্টর (LFTR) একটি উদ্ভাবনী প্রযুক্তি, যা তরল অবস্থায় থোরিয়াম ব্যবহার করে এবং চুল্লির মধ্যে মেল্টডাউন বা বিস্ফোরণের ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে আনে।
🔸পরিবেশগত দিক থেকে থোরিয়ামের গুরুত্ব
থোরিয়াম ব্যবহার করলে যেসব পরিবেশবান্ধব সুবিধা পাওয়া যায়:👇
1. কম তেজস্ক্রিয় বর্জ্য: এটি থেকে উৎপন্ন বর্জ্যের পরিমাণ অনেক কম এবং ক্ষতিকরতা তুলনামূলকভাবে কম দীর্ঘস্থায়ী।
2. কম কার্বন নির্গমন: ফসিল ফুয়েলের বিকল্প হিসেবে থোরিয়াম ব্যবহার করলে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন প্রায় শূন্যের কাছাকাছি রাখা সম্ভব।
3. দীর্ঘস্থায়ী জ্বালানি উৎস: থোরিয়াম থেকে উৎপাদিত শক্তি দীর্ঘস্থায়ী ও নিরবচ্ছিন্ন, যা পুনঃনবীকরণযোগ্য শক্তির অনিশ্চয়তাকে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।
🔸বৈশ্বিক প্রচেষ্টা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বর্তমানে চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং নরওয়ে সহ বেশ কয়েকটি দেশ থোরিয়াম-ভিত্তিক শক্তি উৎপাদনের উপর গবেষণা চালাচ্ছে। ভারতের জন্য থোরিয়াম একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ, কারণ দেশটির উপকূলীয় অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ থোরিয়াম সঞ্চিত রয়েছে। ভারতের তিন ধাপ বিশিষ্ট পারমাণবিক শক্তি পরিকল্পনার তৃতীয় ধাপে থোরিয়াম ব্যবহারের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।
🔸চ্যালেঞ্জসমূহ
থোরিয়াম ব্যবহারের কিছু চ্যালেঞ্জ এখনও রয়ে গেছে, যেমন:
▫️পর্যাপ্ত প্রযুক্তি ও অবকাঠামোর অভাব
▫️রূপান্তর প্রক্রিয়ার জটিলতা
▫️দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের প্রয়োজন
তবে গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
🔸 সংহার
থোরিয়াম ভবিষ্যতের শক্তি চাহিদা পূরণের এক সম্ভাবনাময় ও নিরাপদ পথ। এটি শুধু শক্তিশালী এবং টেকসইই নয়, বরং পরিবেশবান্ধব এবং রাজনৈতিকভাবে নিরাপদও। সঠিক বিনিয়োগ, গবেষণা ও নীতিগত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে থোরিয়াম-ভিত্তিক শক্তি উৎপাদন ব্যবস্থা চালু করা গেলে পৃথিবী এক নতুন, সবুজ, নিরাপদ ও শক্তিসম্পন্ন যুগে প্রবেশ করতে পারবে। সময় এসেছে, আমরা থোরিয়ামের দিকে মনোযোগ দিই – কারণ এটাই হতে পারে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি আশার আলো।
More related topics
How to recognize a failed society |
An old farmer lived in a village | এক গ্রামে এক বৃদ্ধ কৃষক বাস করত

Comments
Post a Comment