Mandra was sitting quietly in a corner of the hospital's black chair. She suddenly fainted ||হাসপাতালের কালো চেয়ারের এক কোণে চুপচাপ বসেছিল মন্দ্রা
হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়ায় বেশি কিছু ভাবনা চিন্তা না করেই সে বাবাকে সামনের হাসপাতালে নিয়ে এসেছে| খানিক আগে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারল বাবার মাথায় ক্লট জমেছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশন করাতে হবে| এদিকে দিন আনি দিন খাই পরিবার, তার টিউশনের দু হাজার টাকাও পরিবারের কাছে অনেক| ষাট হাজার টাকা... অঙ্কটা তাদের মতো পরিবারের জন্য অনেক| দিন দুয়েকের মধ্যে তো দূর, বছরখানেকের মধ্যেও জোগাড় করতে পারবে কিনা সন্দেহ! রিসেপশন ডেস্কে বসা গোলাপি ইউনিফর্ম পরা মহিলার কাছ থেকে টাকার অঙ্কটা শোনার পরপরই মন্দ্রার মনে হল মাথায় আকাশ ভেঙে পড়া বোধহয় একেই বলে| এত টাকা জোগাড় করার সামর্থ্য নেই তার, তবে কি বাবা আর প্রাণে বাঁচবে না? মা কেমন ছিল ভাল করে মনেও নেই তার, অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করতে না পেরে তাকে ফেলে পালিয়েছে| বাবাই খেয়ে না খেয়ে পক্ষী মাতার মতো বুকে আগলে রেখেছিল এতদিন| কিন্তু বাবাই যদি তারাদের দেশে চলে যায়, একলা কিভাবে বাঁচবে মন্দ্রা?
কথাটা মনে আসতেই মন্দ্রা নিজেকে শাসন করল| কি উল্টোপাল্টা ভাবছে সে| এখনো বাবা বেঁচে আছে, যেভাবেই হোক সে বাবাকে ফিরিয়ে আনবে| বাবা ছাড়া দুনিয়া ভাবতেই পারে না সে| এমন সময় হঠাৎই এক সুবেশ ছেলে পাশে এসে বসল| এত জায়গা থাকতে এখানটাই পছন্দ হল, ভেতরে ভেতরে বিরক্ত হল মন্দ্রা| কৌতুহল বড় বালাই, আড়চোখে ছেলেটার দিকে তাকাল সে, বেশ সুন্দর দেখতে পরনের জামাকাপড়ও বেশ দামী| যৌবনের ধর্মই বোধহয় এই! তাকাতে দেখে হাসল সে, মন্দ্রাও ফ্যাকাশে হাসল| আমায় বিয়ে করবেন, মন্দ্রা? Story
পলকে বিস্ময়ের ঘোর কাটল| নির্ঘাত সে পাগলের পাল্লায় পড়েছে| কে জানে কোনো পাগলাগারদ থেকে পালিয়ে এসেছে কিনা? নইলে হাসপাতালের মতো সিরিয়াস জায়গায় বসে কেউ হাসে? এমন উল্টোপাল্টা কথা বলে? জীবন মরণের লড়াই চলছে যেখানে পলে অনুপলে সেখানে দাঁড়িয়ে বিয়ের কথা বলে? কিন্তু এত ভাল দেখতে, এত দামী জামাকাপড়... হতেই পারে, উচ্চবিত্ত পরিবারের কেউ কেউ নিশ্চয়ই পাগল হয়ে যায়| মন্দ্রা শুনেছে তাদের পাড়ার ঘুরে বেড়ানো লোকের উচ্ছিষ্ট খাওয়া তনু পাগলি আগে বড়লোকের একমাত্র মেয়ে ছিল| প্রেমিকের দাগা দেওয়া সহ্য করতে না পেরে পাগল হয়ে গেছে| তনুদি এমনিতে হাসিখুশি ছিল, সবার সঙ্গে কথা বলত, মন্দ্রার সঙ্গেও| কিন্তু একদিন কি হয়েছির কে জানে, হঠাৎই তনু পাগলি মন্দ্রার হাত কামড়ে দেয়! কোনরকমে হাত ছাড়িয়ে পালিয়েছিল ছোট্ট মেয়েটা, সেই থেকে তন্দ্রার পাগলে ভারী ভয়| একে বাবার অপারেশনের টেনশন, তার ওপর পাশে পাগল... চেয়ারের কোনে সিঁটিয়ে গেল মন্দ্রা|
মন্দ্রাকে চুপ করে থাকতে দেখে আবার সে বলে উঠল, বিয়ে করবেন আমাকে? প্লিজ| আমার নাম পঞ্চশীল|দেখুন সত্যি বলতে কি আমার আপনাকে দরকার, আপনার আমাকে| কথা শুনছিলাম রিসেপশনে, আমি চাই না পয়সার অভাবে আপনার বাবার চিকিৎসা মাঝপথে থেমে যাক| আঙ্কেলের ট্রিটমেন্টে যত টাকা লাগে আমি দেব, বিনিময়ে শুধু যদি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হন...
আপনাকে দেখে তো পাগল বলে মনে হচ্ছে না| তাহলে কেন এমন করছেন? দেখুন বাবা ছাড়া আমার আর কেউ নেই, এই মুহূর্তে মানসিকভাবে আমি পুরোপুরি বিধ্বস্ত প্লিজ এসব উল্টোপাল্টা কথা বলে আমায় বিভ্রান্ত করবেন না, বলে উঠল মন্দ্রা|
আপনি কি আমায় একটু হলেও বিশ্বাস করতে পারছেন? যদি পারেন তবে সামনের ক্যাফেটেরিয়ায় চলুন| হাতের ইশারায় হসপিটাল লাগোয়া ক্যাফেটেরিয়া দেখাল আমি আপনাকে সব বুঝিয়ে বলছি| তারপর আপনি যদি রাজী হন, তাহলে দুজনেরই উপকার হবে| আপনি বাবার চিকিৎসা করাতে পারবেন, আমিও নিজের স্বাধীন জীবনে ফিরে যেতে পারব|
দ্বিধাগ্রস্ত পায়ে উঠে দাঁড়াল মন্দ্রা| কথা শুনে পঞ্চশীলকে পাগল বলে মনে হচ্ছে না| সত্যি কি বাবার চিকিৎসার সব টাকা দেবে? তাহলে ছেলেটা যা করতে বলবে সব করবে মন্দ্রা| বাবার পরাণ বাঁচানোর জন্য সে সবকিছু করতে পারে| আপনি সত্যি বলেছেন তো? বাবার চিকিৎসার সব দায়িত্ব আপনি নেবেন?
কথা দিয়েছি যখন আপনার বাবার চিকিৎসা হবে| এই হাসপাতালেই হবে| মিথ্যে বলা না আমার স্বভাব, না আমার পরিবারের| কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আমাদের এমনটা করতে বাধ্য করে| আমি সব বুঝিয়ে বলব আপনাকে, চলুন আগে| ক্যাফেটেরিয়ার দিকে পা বাড়াল পঞ্চশীল, মন্দ্রা তাকে অনুসরণ করল|
সত্যিই যে পঞ্চশীল অতগুলো টাকা দেবে ভাবতে পারে নি মন্দ্রা| কৃতজ্ঞতার চোখে তাকিয়ে বলল, আমার বাবাকে বাঁচানোর জন্য আপনি যা করলেন, জীবনেও ভুলব না| বলুন বিয়েটা কবে করতে হবে?
কাল করলে অসুবিধা আছে?
এত তাড়াতাড়ি? তবে যে শুনেছি নোটিশ দিতে হয়, তাও একমাস আগে| একদিনের মধ্যে সবকিছু অ্যারেঞ্জ করা সম্ভব?
সেটা না হয় আমার ওপরেই ছেড়ে দিন| চেনা একজন ম্যারেজ রেজিস্ট্রার আছে| বেশি টাকা দিলেই কাজ হয়ে যাবে| তিনজন বন্ধুকে নিয়ে যাব সাক্ষী হিসেবে, মালাবদল, মিষ্টিমুখ হয়ে গেল বিয়ে| তারপর সম্পত্তির ওয়ারিশন পেয়ে গেলেই ডিভোর্সের আবেদন... তারপর আপনি আপনার রাস্তায় আমি আমার... খুব একটা ঝক্কির কাজ বলে মনে হচ্ছে কি? ভাল কথা আর একটা ছোট্ট উপকার করতে হবে আপনাকে, না বলবেন না প্লিজ| আমার সঙ্গে একবার অ্যাটর্নির চেম্বারে যেতে হবে কাগজটা দেখাতে, আমার সঙ্গে আপনাকে না দেখলে হয়ত সম্পত্তিটা আমার নামে করতে... বড্ড সন্দেহপ্রবণ মানুষ তো, বুঝতেই পারছেন|
ঠিক আছে| যেমনটা বলবেন, তেমনটাই হবে| কাল কটার সময় যেতে হবে? কোথায় আপনার রেজেস্ট্রি অফিস?
এই হাসপাতালের সামনে চলে আসবেন সেখান থেকে আমি নিয়ে যাব ঠিক|
বিয়ের নাম শুনলে সব মেয়েরাই বোধহয় খানিক এক্সাইটিড হয়ে পড়ে, হোক না সে বিয়ে মিথ্যে বিয়ে| দূর থেকে মন্দ্রাকে দেখে পঞ্চশীল সেটা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করল| মনখারাপের মধ্যেও বেশ একটু সেজে এসেছে মেয়েটা| লাল শাড়ি, লাল ব্লাউজ, হাতে ম্যাচিং লাল চুড়ি, কানে সোনার জল করা ঝোলা দুল, কপালে টিপ, লাগছে বেশ| হয়ত ভেবেছিল জীবনে কোনদিন বিয়ে হবে না, তাই এই মিথ্যে বিয়েকেই মনে মনে সত্যি ভেবে নিয়ে... সত্যি মেয়েদের মন বোঝা দায়| টাকাটা খানিক বাড়িয়ে দিলে কেমন হয়, এত সুন্দরী অথচ এত কম টাকা... বিড়বিড় করল সে|
কিছু বলবেন? লাজুক হাসল মন্দ্রা| দেখলাম বিড়বিড় করছেন| আসলে অ্যাটর্নির কাছে যেতে হবে তো| নতুন কনে লাগে যাতে সে চেষ্টাই করেছি|
আপনাকে সুন্দর লাগছে, বেশ বউ বউ, একটু নার্ভাস হাসল পঞ্চশীল| চলুন যাওয়া যাক|
বিয়ে সেরে অ্যাটর্নির বাড়ির দিকে যুগলে রওনা হল যখন ততক্ষণে রাস্তায় রাস্তায় স্ট্রিট ল্যাম্প জ্বলে উঠেছে| সরু একটা গলির ভেতর দিয়ে যেতে যেতে থমকে দাঁড়াল মন্দ্রা| এ আপনি আমাকে কোথায় আনলেন? এসব মেয়েরা তো... Story
আর পাঁচ মিনিট, প্লিজ| কি করব বলুন, আগেই তো আপনাকে বলেছি মামা কিপ্টে ছিলেন, মারাত্মক কিপ্টে| নইলে কি আর এত টাকা জমাতে পারে! অ্যাটর্নিও বেছেছিলেন তেমন| সে ব্যাটা ভাড়া অনেক কম বলে এ পাড়ায় একতলায় চেম্বার করেছে| চলুন চলুন| দেরি হলে বাড়ি ফিরতে সমস্যা হয়ে যাবে|
সাজানো গোছানো রুমে এসে বসল মন্দ্রা| ঘরটা এক তলায়| এক সুবেশা তরুণী এসে মন্দ্রাকে লম্বা কাঁচের গ্লাসে দইয়ের ঘোল দিয়ে গেল| আপনি খান, গরমে এতখানি পথ হেঁটে এলেন, আরাম পাবেন| একবার দেঠি ভেতরে গিয়ে অ্যাটর্নি ভদ্রলোক গেলেন কোথায়? আমাদের তো বাড়িও ফিরতে হবে|
ঠান্ডা ঘোলে কয়েক চুমুক দিতেই চেয়ারে এলিয়ে পড়ল মন্দ্রা| ঠিক তখনই ঘরের ভেতর ঢুকে এল পঞ্চশীল| সঙ্গে একটা মোটা মহিলা| পানের ছোপ ধরা দাঁত বের করে হাসল, পাল্টা হাসল পঞ্চশীল, তাহলে মাসি একদম ঠিক জিনিস সাপ্লাই দিলাম তো, দাও, এবার আমার টাকাটা দাও, দেখি|
হাসিমুখে ব্যাগটা পঞ্চশীলের হাতে তুলে দিতে যাওয়ার সময় ঘরে ঢুকে পড়ল পুলিশ, ইয়্যু আর আন্ডার অ্যারেস্ট, পঞ্চশীল ওরফে অখিল ওরফে সুরিন্দর|
রিভলভার হাতে বয়স্ক লোকটাকে দেখে আকাশ থেকে পড়ল পঞ্চশীল, আপনি তো হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, মন্দ্রার বাবা, ব্রেনে অপারেশন হওয়ার কথা আপনার| এখানে এলেন কিভাবে? আর পুলিশি পোশাক?
উনি আমার বাবা নন, আমার সহকর্মী| গম্ভীর মুখে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল মন্দ্রা| কিছুদিনের মধ্যে তিনটে মিসিং রিপোর্ট এসেছিল পুলিশ স্টেশনে| পাড়া প্রতিবেশীরাই এসেছিলেন রিপোর্ট লেখাতে| হঠাৎ হঠাৎ গায়েব হয়ে যাচ্ছে তরুণী মেয়েরা| তিনটে কেস স্টাডি করলাম, দেখলাম প্রতিটা ক্ষেত্রে গল্প মোটামুটি এক, হয় মা অসুস্থ নয় বাবা, গরীব, টাকাপয়সা নেই একদম| বুঝলাম টোপ ফেলে শিকার ধরার কাজ চলছে| তখনই ভাবলাম তোকে হাতে নাতে ধরার জন্য আমাকেই আসরে নামতে হবে| টোপ ফেললাম| কি বুঝলি? পঞ্চশীলের গালে সজোরে দুটো থা*প্পড় লাগাল মন্দ্রা, গাল চেপে চিৎকার করে উঠল পঞ্চশীল| এই কারবার কদ্দিন ধরে চালাচ্ছিস? ঠিক কতগুলো মেয়েকে এখানে পা*চার করেছিস?
আমি কিছু জানি না, সত্যি বলছি| এই ব্যাগও আমার নয়| হাতে ধরা ব্যাগটা দূরে ছুঁড়ে দিল পঞ্চশীল ওরফে সুরিন্দর| প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন|
জানিস না লক্ষ্মী চঞ্চলা| তুই কিনা তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিস, এত সাহস তোর? লালবাজারে নিয়ে গিয়ে এমন মেরামত করব না, ভুলে যাবি সামনে পি*ছনে কি ছিল! কি আছে! চালাকিটা ভালই খেলেছিলি, অসহায় কোন রোগী হাসপাতালে এলে সাহায্যের ছুতোয় তার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতিস| অসহায় মেয়েগুলো তোকে বিশ্বাসও করত| সংসারে কেউ নেই, একাকী, অসহায়, সাহায্যের প্রত্যাশী মেয়েগুলোর জন্য তোর দ*রদ উথলে উঠত| মৃত মামার উইলের গল্প ফেঁদে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিতিস| তারপর বুঝিয়ে বাজিয়ে এখানে এনে ফেলতে পারলেই মোটা টাকা| কিছু দিয়ে অনেক লাভ| হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও জানে তুই ভাল লোক, গরীব মানুষজনকে সাহায্য করে থাকিস| আমি আগেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দিয়েছিলাম| আমার প্ল্যানমাফিক টোপ বেছানো হয়| সিনিয়র ইন্সপেক্টর জাভেদ আমার বাবা সাজেন| জানতাম মাছ টোপ গিলবেই, না গিলে যাবে কোথায়?
হাতকড়া পরিয়ে প্রিজন ভ্যানে তোলা হচ্ছে পঞ্চশীল ওরফে সুরিন্দরকে| কিন্তু সে কেবল একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে মন্দ্রার দিকে| এমন মেয়েও হয় পৃথিবীতে? শেষে থাকতে না পেরে কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে উঠল, কে আপনি? আপনি কে?
আমার দিকে তাকিয়ে কথা বল, বলে উঠলেন জাভেদ আহমেদ| উনি এসিপি রেবতী চ্যাটার্জি, আইপিএস, স্পেশাল ব্রাঞ্চ|
More real tide topics
Shall we start planning the picnic পিকনিকের প্ল্যান টা শুরু করি তাহলে?

Comments
Post a Comment