I wasn't feeling well, so I woke up a little late. When I arrived at the pond, I saw ||শরীরটা ভালো লাগছিলো না তাই ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হয়ে গেলো। পুকুরঘাটে এসে দেখি
শ্বাশুড়ি হাড়ি পাতিল পরিষ্কার করছে। আমি যখন শ্বাশুড়িকে বললাম,
--মা, আপনি কেন এইগুলো পরিষ্কার করছেন? আমিই তো একটু পর পরিষ্কার করতাম।
শ্বাশুড়ি রেগে গিয়ে পাতিলটা আছাড় মেরে বললো,
-"আমার কপাল যে খুব ভালো তাই শখে এইকাজ গুলো করছি। ছেলেকে বিয়ে করানোর আগেও আমি এই সংসারে বান্দীগিরি করেছি। আর বিয়ে করানোর পরেও এই সংসারে বান্দীগিরি করা লাগছে।"
আমি কিছু না বলে চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম। শ্বাশুড়ি তখন আরো রেগে গিয়ে বললো,
-"আমার সামনে এইভাবে তালগাছের মতো দাঁড়িয়ে না থেকে যাও তো"
আমি আর কিছু না বলে উনার সামনে থেকে চলে গেলাম। বারান্দায় বসে আছি আর ভাবছি আমার অন্যায়টা কোথায়? শ্বাশুড়ি সারাক্ষণ আমায় কেন ঝাড়ির উপর রাখে? কোন কাজ করতেও দিবে না আবার আমি কাজ না করলেও বকা দিবে।
একটু পর দেখি শ্বাশুড়ি হাড়িপাতিল গুলো পরিষ্কার করে বারান্দায় রাখলো। আমায় বসে থাকতে দেখে ধমক দিয়ে বললো,
-"বলি এইভাবে বকের মতো এক পা তুলে বসে না থেকে বাড়ির উঠানটা তো একটু ঝাড়ু দিতে পারতে। চোখ মেলে কি দেখা যায় না উঠান জুড়ে কত ময়লা পড়ে আছে।"
আমি ঝাড়ুটা হাতে নিয়ে বললাম,
--এখনি মা আমি ঝাড়ু দিয়ে দিচ্ছি।
শ্বাশুড়ি আমার হাত থেকে ঝাড়ুটা কেড়ে নিয়ে বললো,
-"থাক তোমার আর ঝাড়ু দিতে হবে না। তুমি ঝাড়ু দিলে তো আবার উঠান পরিষ্কার হয় না। ঝাড়ু আমি দিচ্ছি তুমি উনানে আগুনটা একটু ধরাও আমি এসে রান্না বসাবো"
শ্বাশুড়ির কথাশুনে আমি কিছুটা অবাক হয়ে বললাম,
--মা, এই রোজার সময় এতো সকালে রান্না বসাবেন? বিকালের দিকে রান্না বসালেই হবে। তাহলে সন্ধ্যা পরেও ভাত গরম থাকবে। এখন ভাত রান্না করলে ঠান্ডা হয়ে যাবে।
শ্বাশুড়ি আমায় আবার একটা ঝাড়ি দিয়ে বললো,
-"তোমায় যা করতে বলছি করো। এতো মাতব্বরি করতে হবে না তোমাকে"
আর আর কিছু না বলে পাকাঘরে চলে গেলাম। উনানে অনেকক্ষণ ধরে আগুন জালাবার চেষ্টা করছি কিন্তু আগুন ধরছে না। শুধু ধোয়া বের হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর শ্বাশুড়ি এসে নিজের কপাল নিজে চাপরে বললো,
-"কোন শখে যে মোড়ল বাড়ির মেয়েকে ঘরের বউ করে এনেছিলাম ভগবান জানে। যে মেয়ে উনানে আগুন পর্যন্ত ধরাতে পারে না সেই মেয়ে কিনা আবার সংসার করে খাবে। যাও মেয়ে তুমি ঘরে তোমার স্বামীর কাছে যাও। আমি তো আছিই বান্দীগিরি করার জন্য"
শ্বাশুড়ির কথাগুলো কেন জানি আর সহ্য করতে পারছিলাম না। তাই রাগেই উনার সামনে থেকে চলে আসলাম। ঘরে যখন মনমরা হয়ে বসে ছিলাম তখন স্বামী এসে শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে আমায় বললো,
-"কি হলো মন খারাপ করে বসে আছো কেন?"
আমি বললাম,
--আমি বুঝতে পারছি না আপনার মা কেন আমায় সারাক্ষণ বকাঝকা করে। আমায় কোন কাজ করতে না দিয়ে উনিই সব কাজ করবে আবার নিজেই বলবে উনি নাকি এই সংসারের কাজের লোক
আমার স্বামী তখন হেসে বললো,
-"আরে আমার মায়ের কথায় কিছু মনে করো না। মা এমনি একটু খিটখিটে মেজাজের। তবে আমার মায়ের মনটা খুব ভালো। আচ্ছা আমি একটু দরকারে বাজারে গেলাম। গরুগুলো না খেয়ে আছে। যদি পারো গরুগুলোকে খেতে দিও।"
কথাটা বলে স্বামী চলে গেলো। আমি গরুগুলোকে খড় দিচ্ছিলাম। এমন সময় শ্বাশুড়ি ছুটে এসে বললো,
-" তুমি গরুকে খাওয়াচ্ছো কেন? ঘরের ভিতর যে একটা গরু আছে সেই গরুটা কই?"
শ্বাশুড়ির কথা শুনে আমি কেন জানি হেসে দিলাম। শ্বাশুড়ি যখন রাগী চোখে আমার দিকে তাকালো তখন আমি আমতা-আমতা করে বললাম,
-- কি একটা দরকারে উনি একটু বাজারে গেছেন। আমায় বললো গরুগুলোকে খাবার দিতে।
আমার কথা শুনে শ্বাশুড়ি বিড়বিড় করে কি যেন একটা বললো। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-"রান্না হয়ে গেছে। তুমি হাত মুখ ধুয়ে খেয়ে নাও।"
শ্বাশুড়ি কথা শুনে আমি অবাক হয়ে বললাম,
--না মা আমি তো...
শ্বাশুড়ি আমায় থামিয়ে দিয়ে বললো,
-"বিস্কুট খেয়ে দিন পার না করে ভাত খেয়ে নাও। আমি শ্বাশুড়ি হলে কি হবে আমিও তো মেয়ে মানুষ। আমি তো বুঝি সব। আর মেয়ে মানুষের প্রতি মাসে মাসিক হবে এটা স্বাভাবিক। এইসময় উপাস রাখা যায় না। তোমার যেহেতু এই সমস্যাটা হয়েছে এখন উপাস না করে আমার ভয়ে রাখার অভিনয় করতে হবে নাকি? যাও মা তুমি খেয়ে নাও আমি গরু গুলোকে খাওয়াচ্ছি।"
ঘরে এসে দেখি শ্বাশুড়ি ভাত তরকারি বেড়ে রেখেছে। আমি ভাতের প্লেটটা হাতে নিয়ে যখন খেতে যাবো তখন শুনি আমার শ্বাশুড়ি আমার স্বামীকে সমানে বকে যাচ্ছে আর বলছে,
-" আমি এতো শখ করে মোড়ল বাড়ির মেয়েকে বিয়ে করিয়ে এনেছিলাম গরুকে ঘাস খাওয়ানোর জন্য নাকি? তুই কোন সাহসে ঘরের বউকে বলিস গরুকে ঘাস খাওয়াতে? তুই কি তোর বাপের মতো তোর বউকেও এই সংসারে বান্দীগিরি করাতে চাস? তোর বাপ তো সারাজীবন আমারে দিয়ে এই সংসারে বান্দীগিরি করিয়েছে। কিন্তু আমি বেঁচে থাকতে তুই তোর বউয়ের সাথে এমন করতে পারবি না। তোর বাপ যা আমার সাথে করছে। অনেক শখ করে ফুলের মতো মেয়েটাকে এই বাড়ির বউ করে এনেছি"
আমি শ্বাশুড়ির কথাগুলো শুনছিলাম আর নিরবে চোখের জল ফেলছিলাম। আমার অজান্তেই আমার শ্বাশুড়ি আমায় কতটা ভালোবাসে অথচ কিছুক্ষণ আগে পর্যন্ত আমি তার ভালোবাসাটা বুঝি নি। আমি শুধু উনার খিটখিটে মেজাজটাই দেখেছি। মনের ভিতর ভালোবাসাটা বুঝি নি....
পরের দিন ঘুম থেকে উঠে দিখে শ্বাশুড়ি উঠান ঝাড়ু দিচ্ছেন। আমি তখন শ্বাশুড়িকে বললাম,
--মা আপনি কেন ঝাড়ু দিচ্ছেন? আমিই তো ঝাড়ু দিতাম।
শ্বাশুড়ি রেগে বললো,
-"বান্দীর কপাল নিয়ে জন্মাইছি তো তাই বান্দীগিরি করছি"
শ্বাশুড়ির কথা শুনে আমি জোরে জোরে হাসতে লাগলাম। শ্বাশুড়ি আমার হাসি দেখে ঝাড়ু আছাড় মেরে ফেলে দিয়ে বারান্দায় বসে বললো,
-"করলাম না এই সংসারে বান্দীগিরি।"
আমি উঠান ঝাড়ু দিচ্ছি আর মুচকি মুচকি হাসছি। শ্বাশুড়ি বারান্দায় বসে বিড়বিড় করছে আর রাগে জ্বলছে...
আমাদের সংসার জীবনে সব শ্বাশুড়িই যে রিনা মতো অত্যাচারী হয় তা কিন্তু না। কিছু কিছু শ্বাশুড়ি মনিরা মিঠুর মত খিটখিটে হলেও খুবই মমতাময়ী।
More related story

.jpeg)
Comments
Post a Comment