Skip to main content

The glory of experience is the invaluable lesson of a strange country


অভিজ্ঞতার মহিমা এক অদ্ভুত দেশের অমূল্য শিক্ষা | The glory of experience is the invaluable lesson of a strange country



 


এক দেশে এক অদ্ভুত নিয়ম প্রচলিত ছিল। সেই দেশের রাজা মনে করতেন, বৃদ্ধ মানুষ সমাজের জন্য বোঝা। তারা আর কাজ করতে পারে না, উৎপাদনশীল নয়— তাই তাদের বাঁচিয়ে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। তাই তিনি এক নিষ্ঠুর আইন জারি করেছিলেন— যেই ব্যক্তি বার্ধক্যে উপনীত হবে, তাকে পাহাড়ে নিয়ে ফেলে আসতে হবে। যেন মৃত্যু তার প্রাকৃতিক নিয়মে নয়, বরং রাজকীয় আদেশে ঘটে।



সেই দেশে এক পিতা ও পুত্র বাস করত। তারা ছিল একে অপরের পরম বন্ধু। পুত্র তার বাবাকে শুধু ভালোবাসতই না, গভীর শ্রদ্ধাও করত। কিন্তু সময়ের নিয়মে একদিন বাবা বৃদ্ধ হয়ে পড়লেন। তার হাতের জোর কমে এলো, শরীর আর আগের মতো কাজ করতে পারল না। দেশের নিয়ম অনুযায়ী, এখন পুত্রের দায়িত্ব— বাবাকে পাহাড়ে ফেলে আসা।

ছেলের বুক কেঁপে উঠল। বাবাকে ছাড়া জীবন কল্পনা করা যায় না, কিন্তু রাজা অবাধ্য হলে শাস্তি ভয়ংকর। তাই চোখের জল লুকিয়ে, মনের কষ্ট চেপে, এক সকালে ছেলেটি বাবাকে কাঁধে নিয়ে পাহাড়ের পথে রওনা দিল।

পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছে চারদিকে তাকাল সে। বাতাসে নীরবতা, নিচে ভয়ংকর খাদ। তার মন বিদীর্ণ হয়ে গেল। সে বুঝল, এই জায়গায় বাবাকে রেখে যাওয়া মানে নিজের আত্মাকে হত্যা করা। শেষ পর্যন্ত সে আর পারল না। বাবাকে বুকে চেপে সে ঘরে ফিরে এল।

বাবাকে সে লুকিয়ে রাখল বাড়ির পেছনের এক ছোট ঘরে। গোপনে প্রতিদিন খাবার এনে খাওয়াতে লাগল। বাইরে কেউ টের পেল না, কিন্তু ছেলের মনে ছিল ভয় ও ভালোবাসার অদ্ভুত মিশ্র অনুভূতি।

একদিন রাজা হঠাৎ ঘোষণা করলেন, “আমি আমার প্রজাদের বুদ্ধি যাচাই করতে চাই। যে ছাই দিয়ে দড়ি তৈরি করতে পারবে, তাকে পুরস্কার দেওয়া হবে!”





সারা দেশ জুড়ে হাহাকার পড়ে গেল। ছাই দিয়ে কখনও দড়ি বানানো যায়? সবাই হতবুদ্ধি। ছেলেটিও ভাবল, এটা অসম্ভব। তবু সে বাবার কাছে গিয়ে সব বলল। বৃদ্ধ বাবা হেসে বললেন, “একটা দড়ি নিয়ে সেটাকে বড় পাত্রে পেঁচিয়ে রাখো, তারপর আগুনে পুড়িয়ে দাও। দেখবে, ছাই হলেও দড়ির আকৃতি থাকবে।”

ছেলে বাবার কথামতো কাজ করল। সত্যিই, দড়ি পুড়ে ছাই হলেও তার রূপ আগের মতো রইল। ছেলেটি সেটি রাজাকে দেখাল। রাজা অবাক হয়ে গেলেন এবং পুরস্কার দিলেন।

কয়েকদিন পর রাজা আবার নতুন প্রশ্ন তুললেন— “এই কাঠের ডালের আগা আর গোড়া চিহ্নিত করে দেখাও।”
সবাই বিভ্রান্ত। ডালের দুই প্রান্ত একই রকম, বোঝার উপায় নেই কোনটা আগা আর কোনটা গোড়া। আবার ছেলেটি বাবার শরণ নিল।
বাবা বললেন, “ডালটি পানিতে রাখো। দেখবে, যে দিকটা ভারী, সেটি ডুবে যাবে— সেটিই গোড়া। আর হালকা দিকটি ভেসে থাকবে— সেটিই আগা।”




ছেলে বাবার উপদেশ মতো কাজ করল। রাজাকে বুঝিয়ে দিল, কোন দিক আগা আর কোন দিক গোড়া। রাজা মুগ্ধ হয়ে তাকে আরও পুরস্কৃত করলেন।

এবার রাজা তৃতীয় ও সবচেয়ে কঠিন প্রশ্ন দিলেন— “একটি ঢোল বানাও, যা কোনো আঘাত ছাড়াই শব্দ করবে।”
পুরো রাজ্য স্তব্ধ। কেউই উত্তর দিতে পারল না। আবারও ছেলেটি তার গোপন শিক্ষক— বৃদ্ধ বাবার কাছে গেল।



বাবা বললেন, “একটি ঢোল বানাও, কিন্তু তার ভেতরে একটা মৌমাছির চাক রেখে দাও।”

ছেলে ঠিক সেইভাবেই ঢোল তৈরি করল। রাজা যখন ঢোলটি নাড়লেন, ভেতরের মৌমাছিরা গুনগুন করে উড়তে শুরু করল। ঢোলে কোনো আঘাত ছাড়াই শব্দ হতে লাগল।
রাজা বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কীভাবে এত অদ্ভুত বুদ্ধির জোগাড় করো?”




ছেলে বিনয়ের সঙ্গে মাথা নিচু করে বলল, “মহারাজ, এই বুদ্ধি আমার নয়। আমার বৃদ্ধ বাবাই আমাকে পথ দেখান। আমি শুধু তার কথা মতো কাজ করি।”

রাজা কিছুক্ষণ নীরবে রইলেন। তার মনে এক অদ্ভুত আলো জ্বলে উঠল। তিনি উপলব্ধি করলেন, যে মানুষগুলোকে তিনি ‘অক্ষম’ ভেবে ফেলে দিতে বলেছিলেন, তারাই আসলে জ্ঞানের ভাণ্ডার। তাদের অভিজ্ঞতা ছাড়া রাজ্য পরিচালনা, সমাজের উন্নয়ন— সবই অসম্পূর্ণ।

তখনই রাজা ঘোষণা করলেন, “আজ থেকে আর কোনো বৃদ্ধকে পাহাড়ে ফেলে দেওয়া হবে না। তাদের অভিজ্ঞতা এই রাজ্যের সম্পদ।”

রাজ্যের মানুষ আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল। আর সেই দিন থেকে বৃদ্ধদের আর ভয় ছিল না। তারা পরিবারের সঙ্গে, সমাজের সঙ্গে আনন্দে বাঁচতে লাগল।

এই ঘটনার পর দেশটি বদলে গেল। মানুষ বুঝতে পারল— বয়স বাড়া মানে দুর্বলতা নয়, বরং অভিজ্ঞতার পরিপূর্ণতা। এক বৃদ্ধের জ্ঞান কখনও কখনও শত তরুণের শক্তির চেয়েও মূল্যবান হতে পারে।



শিক্ষা:
এই গল্প আমাদের শেখায়, অভিজ্ঞতা কখনও ফেলে দেওয়ার জিনিস নয়। একজন বৃদ্ধের পরামর্শ, তার দেখা জীবন, তার ব্যর্থতা ও সফলতার ইতিহাস— সবই এক অমূল্য ধন। তরুণ প্রজন্মের উচিত তাদের পাশে থাকা, তাদের কথা মন দিয়ে শোনা। কারণ তারা যা জানে, তা বইয়ে লেখা নেই— তা জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া জ্ঞান।

আমরা যখন সমাজে বয়স্ক মানুষদের অবহেলা করি, তখন আমরা নিজেরাই ভবিষ্যতের আলো নিভিয়ে ফেলি। কারণ একদিন আমরাও বৃদ্ধ হবো, এবং তখন আমাদেরও প্রয়োজন হবে ভালোবাসা, যত্ন ও শ্রদ্ধার।

বৃদ্ধ মানুষদের অবমূল্যায়ন করে কোনো সমাজ কখনও এগিয়ে যেতে পারে না। বরং যারা তাদের সম্মান দেয়, তাদের কাছ থেকেই জন্ম নেয় জ্ঞান, মানবতা ও সভ্যতা।

এই গল্প তাই শুধু এক ছেলের ভালোবাসার গল্প নয়, এটা এক জাতির পুনর্জাগরণের কাহিনি।
অভিজ্ঞতা— সেটাই প্রকৃত সম্পদ, আর বয়স্ক মানুষরাই সেই সম্পদের রক্ষক।





More recommend story

Home


ভিক্টোরিয়ান যুগের কর্সেট সৌন্দর্যের আবরণে লুকানো যন্ত্রণার ইতিহাস | The history of suffering hidden behind the veil of Victorian-era corset beauty




২১শে অক্টোবর ১৯৪৩ ভারতের প্রকৃত স্বাধীনতার দিন আজাদ হিন্দ ফৌজের বীরত্বগাঁথা | The heroic story of Azad Hind Fauj on the day of India's true independence






Comments

Popular posts from this blog

A girl was having bangla golpo

  একটি মেয়ের বিবাহিত জীবনে প্রচুর অশান্তি হচ্ছিল সে কোনো ভাবেই |  A girl was having a lot of trouble in her married life English convert scroll 👇 Married life পরিবর্তনের শুরু নিজেকে বদলে দেওয়া থেকেই : তার স্বামীকে মেনে নিতে পারছিল না,মনের মধ্যে এতোটাই রাগ জন্মেছিল যে সে তার স্বামীকে খুন পর্যন্ত করতে চাইছে।  একদিন সকালে সে তার মায়ের কাছে গিয়ে বললো- “আমি আমার স্বামীকে নিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি,আমি আর তার বাজে কথা মেনে নিতে পারছি না। আমি তাকে খুন করতে চাই,কিন্তু আমি ভয়‌ পাচ্ছি যে দেশের আইন আমাকে দায়ী করবে। তুমি কি এই বিষয়ে আমাকে সাহায্য করতে পারো মা..??” bangla golpo মা উত্তর দিলেন- “হ্যাঁ, আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি। তবে তার আগে কয়েকটি কাজ আছে যা তোমাকে করতে হবে।” মেয়ে জিজ্ঞাসা করলো- “কি কাজ মা..?? আমি তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য যে কোনো কাজ করতে প্রস্তুত আছি।” মা বললেন- “ঠিক আছে, তাহলে শোনো:- ১. তোমাকে প্রথমেই তার সাথে খুব ভালোভাবে শান্তিতে কিছুদিন থাকতে হবে,যাতে সে মারা যাওয়ার পর কেউ তোমাকে সন্দেহ করতে না পারে। ২. তার কাছে সুন্দরী এবং আকর্ষণীয়া দেখাব...

Mandra was sitting bangla golpo

Mandra was sitting quietly in a corner of the hospital's black chair. She suddenly fainted ||হাসপাতালের কালো চেয়ারের এক কোণে চুপচাপ বসেছিল মন্দ্রা হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়ায় বেশি কিছু ভাবনা চিন্তা না করেই সে বাবাকে সামনের হাসপাতালে নিয়ে এসেছে| খানিক আগে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারল বাবার মাথায় ক্লট জমেছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশন করাতে হবে| এদিকে দিন আনি দিন খাই পরিবার, তার টিউশনের দু হাজার টাকাও পরিবারের কাছে অনেক| ষাট হাজার টাকা... অঙ্কটা তাদের মতো পরিবারের জন্য অনেক| দিন দুয়েকের মধ্যে তো দূর, বছরখানেকের মধ্যেও জোগাড় করতে পারবে কিনা সন্দেহ! রিসেপশন ডেস্কে বসা গোলাপি ইউনিফর্ম পরা মহিলার কাছ থেকে টাকার অঙ্কটা শোনার পরপরই মন্দ্রার মনে হল মাথায় আকাশ ভেঙে পড়া বোধহয় একেই বলে| এত টাকা জোগাড় করার সামর্থ্য নেই তার, তবে কি বাবা আর প্রাণে বাঁচবে না? মা কেমন ছিল ভাল করে মনেও নেই তার, অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করতে না পেরে তাকে ফেলে পালিয়েছে| বাবাই খেয়ে না খেয়ে পক্ষী মাতার মতো বুকে আগলে রেখেছিল এতদিন| কিন্তু বাবাই যদি তারাদের দেশে চলে যায়, একলা কিভাবে বাঁচবে মন্দ্রা? কথাটা ...

Pride is terrible bangla golpo

  যার ভালোবাসা গভীর তার অভিমান ভয়ংকর | He whose love is deep his pride is terriblehoop English convert scroll 👇 মানুষকে কখনও একা কাঁদার সময় দিতে নেই জানেন! একবার কেউ একা কাঁদতে শিখে গেলে, তার আর কারও প্রয়োজন হয় না।  -আগে জানতাম না, তবে এখন জানি। মেয়েদের অভিমান ভালোবাসার চেয়েও ভয়ংকর।  -আংশিক ভুল জানেন আপনি।  -সঠিকটা তবে জানিয়ে দিন।  -যার ভালোবাসা যত গভীর, তার অভিমান তত ভয়ংকর।  -আপনি বলছেন যখন, মেনে নিলাম।  -আপনার ভালোবাসতে ইচ্ছে করে না জ্যোতিষ্ক?  -করে তো! কিন্তু জীবনের সাময়িক উদ্দেশ্য পূরণের স্বার্থে এমন কিছু ব্যক্তিগত ক্ষতি হয়ে গেছে, যা আমি চাইলেও ফেরাতে পারব না। আপনার গল্প বলুন ম্যাডাম। যাঁরা ভালোবাসতে জানেন, তাঁদের কাছে ভালোবাসার গল্প শুনতে ভালো লাগে।  -আমি আর কী বলব? যখন মন ভুল পথনির্দেশ দেয়, তখন সঠিক পথে হাঁটার জন্য নিজের মনের বিরুদ্ধে যেতে হয়। আমিও গেছি, এখন একরকম ভালোই আছি।  -সত্যিই ভালো আছেন? কতটা ভালো আছেন? জানতে ইচ্ছে করে।  -ঠিক জানি না। কী পেয়েছি, কতটা হারিয়েছি, সেই হিসেব রাখি না। আজকাল নিজের ভালো থাকার চেয়েও, অন্যের ভাল...