Skip to main content

The heroic story of Azad Hind Fauj on the day of Indias true independence

  

২১শে অক্টোবর ১৯৪৩ ভারতের প্রকৃত স্বাধীনতার দিন আজাদ হিন্দ ফৌজের বীরত্বগাঁথা | The heroic story of Azad Hind Fauj on the day of India's true independence







জয় হিন্দ!

২১শে অক্টোবর—ভারতীয় ইতিহাসের এক অবহেলিত কিন্তু অমর দিন। এই দিনেই সিঙ্গাপুরে গঠিত হয়েছিল আজাদ হিন্দ সরকার, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে।
এটি ছিল এক স্বাধীন ভারত সরকারের জন্ম—ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের প্রকৃত ঘোষণা। অথচ আজও এই দিনটি আমাদের জাতীয় ইতিহাসে যথাযথ মর্যাদা পায়নি।




পটভূমি: বিপ্লবের আগুন থেকে জন্ম আজাদ হিন্দের

১৯৪০-এর দশক। ব্রিটিশ শাসনের শৃঙ্খলে জর্জরিত ভারত। একদিকে কংগ্রেসের অহিংস আন্দোলন, অন্যদিকে বিপ্লবীদের সশস্ত্র সংগ্রাম।
এই সময়েই জার্মানি থেকে পালিয়ে আসেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, যিনি বিশ্বাস করতেন—

“স্বাধীনতা ভিক্ষা করে পাওয়া যায় না, তাকে অর্জন করতে হয়।”


তিনি বার্লিনে প্রথম Free India Centre গঠন করেন, পরে জাপানের সহায়তায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যান এবং ১৯৪৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন আজাদ হিন্দ ফৌজ (INA)—ভারতের মুক্তি বাহিনী।
এই সেনাবাহিনীর মূল লক্ষ্য ছিল সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে ভারতের মাটি থেকে ব্রিটিশদের তাড়ানো।





২১শে অক্টোবর ১৯৪৩: এক ঐতিহাসিক ঘোষণা

সিঙ্গাপুরে এক ঐতিহাসিক সমাবেশে নেতাজি ঘোষণা করেন—

“আজ আমরা এক স্বাধীন ভারত সরকারের জন্ম দিচ্ছি—আজাদ হিন্দ সরকার।”


এটি ছিল ভারতের প্রথম প্রবাসী স্বাধীন সরকার, যার প্রধান ছিলেন স্বয়ং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু।
সরকারে স্বরাষ্ট্র, অর্থ, যুদ্ধ, পররাষ্ট্র—সব মন্ত্রিত্ব নির্ধারিত হয়েছিল।
এমনকি তাদের নিজস্ব মুদ্রা, পাসপোর্ট ও রাষ্ট্রীয় প্রতীকও ছিল।

আজাদ হিন্দ সরকারের গঠন ছিল প্রতীকী নয়, ছিল বাস্তব।
কারণ মাত্র কয়েক মাস পর, এই সরকার আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণ করে—যা তখন জাপান অধিকৃত ছিল।
সেই দ্বীপগুলির নাম নেতাজি পরিবর্তন করেন—আন্দামানকে “শহীদ দ্বীপ” ও নিকোবরকে “স্বরাজ দ্বীপ”।





আজাদ হিন্দ ফৌজের বীরত্বগাঁথা

আজাদ হিন্দ ফৌজের সৈন্যসংখ্যা ছিল প্রায় ৩০,০০০
তাদের মধ্যে ছিলেন হিন্দু, মুসলমান, শিখ, খ্রিস্টান—সব ধর্মের মানুষ।
তারা সবাই এক পতাকার নিচে, এক শপথে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল—“চলো দিল্লি!”

১৯৪৪ সালে ইম্ফল ও কোহিমা অভিযানে এই ফৌজের সেনারা অমানুষিক সাহসিকতার পরিচয় দেন।
অসংখ্য সৈনিক জাপানের সহায়তায় বার্মা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের মাটিতে প্রবেশ করেন।
কিন্তু অস্ত্র ও রসদের অভাবে এবং মিত্রবাহিনীর প্রতিরোধে অভিযানটি সফল হয়নি।
তবুও এই যুদ্ধ ভারতীয়দের মনে স্বাধীনতার আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল।





৩০ হাজার শহিদের আত্মত্যাগ

এই লড়াইয়ে প্রায় ৩০ হাজার আজাদ হিন্দ সেনা শহিদ হয়েছিলেন।
তারা মৃত্যুর মুখে হেসে বলেছিলেন—

“আমার মৃত্যু যদি ভারতের স্বাধীনতার মূল্য হয়, তবে সেই মূল্য আমি দিতে প্রস্তুত।”


এই অজানা বীরদের অনেকের নাম আজও ইতিহাসের পৃষ্ঠায় নেই।
তাদের কবরের ওপরে লেখা হয়নি কোনো নাম, কিন্তু প্রতিটি অজানা কবরই ভারতমাতার অমর সন্তানদের চিহ্ন বহন করে।






ব্রিটিশদের ভয় ও ভারতের জাগরণ

যখন আজাদ হিন্দ ফৌজের সৈন্যদের বিচার শুরু হয়—রেড ফোর্ট ট্রায়াল (১৯৪৫)—তখন পুরো ভারত উত্তাল হয়ে ওঠে।
কলকাতা, বোম্বে, দিল্লি থেকে শুরু করে ছোট শহরগুলোতেও ছাত্র, শ্রমিক, সৈন্যরা আন্দোলনে ফেটে পড়েন।
ব্রিটিশ নৌবাহিনীর বিদ্রোহ (1946) পর্যন্ত এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে।
এই বিদ্রোহ ও জনঅসন্তোষের জেরে ব্রিটিশ সরকার বুঝতে পারে—ভারতকে আর দাসত্বে রাখা সম্ভব নয়।

তাই বলা হয়—ভারতের স্বাধীনতার মূল ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন নেতাজি ও আজাদ হিন্দ ফৌজের সৈনিকরা।








কেন ২১শে অক্টোবর ভারতের প্রকৃত স্বাধীনতা দিবস

অনেকে বলেন—১৫ই আগস্ট ১৯৪৭ আমাদের স্বাধীনতার দিন।
কিন্তু ইতিহাসের গভীরে তাকালে দেখা যায়—২১শে অক্টোবর ১৯৪৩-এই প্রথমবারের মতো ভারতকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল।
তখনই ভারতের সরকার ছিল, পতাকা ছিল, জাতীয় সংগীত ও যুদ্ধবাহিনী ছিল।
অর্থাৎ স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছিল প্রথম সেদিনই।

নেতাজি বলেছিলেন—

“Give me blood, and I will give you freedom.”
আর সেই রক্ত দিয়েই ২১শে অক্টোবরের সূর্য উঠেছিল—স্বাধীন ভারতের সূর্য।






চক্রান্ত ও অবহেলা

দুঃখের বিষয়, স্বাধীনতার পর আজাদ হিন্দ ফৌজের ইতিহাস ইচ্ছাকৃতভাবে আড়াল করা হয়।
রাজনৈতিক স্বার্থে নেতাজি ও তাঁর সৈনিকদের অবদান ছোট করে দেখা হয়েছে।
স্কুলের বইয়ে তাদের নাম নেই, পাঠ্যক্রমে ইতিহাস বিকৃত করে দেওয়া হয়েছে।
ফলে আজও বহু ভারতীয় জানেন না—২১শে অক্টোবরের এই আত্মত্যাগের কাহিনি।

যারা এই ইতিহাস চেপে রেখেছেন, তাঁরা শুধু নেতাজির প্রতি নয়, ভারতের আত্মার প্রতিও অন্যায় করেছেন।
কারণ জাতি তার বীরদের ভুললে নিজের অস্তিত্ব ভুলে যায়।






আজকের প্রজন্মের দায়িত্ব

আজ ২১শে অক্টোবর কেবল একটি দিন নয়—এটি এক চেতনা
এই দিনে আমাদের মনে রাখতে হবে—স্বাধীনতা কোনো সরকারের উপহার নয়; এটি অসংখ্য প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত একটি সত্য।
যে সৈনিকেরা বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে “চলো দিল্লি” বলে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, তাদের আত্মত্যাগই আমাদের জাতীয় গর্বের ভিত্তি।

আজকের প্রজন্মের কাজ—এই ইতিহাসকে জানানো, বলা এবং ছড়িয়ে দেওয়া।
যাতে আগামী প্রজন্ম জানে, স্বাধীনতার পতাকার পেছনে কত অজানা রক্তের ধারা বইছে।






উপসংহার: এক অমর প্রতিজ্ঞা

২১শে অক্টোবর শুধু অতীতের স্মৃতি নয়, এটি ভবিষ্যতের প্রতিজ্ঞা।
নেতাজির স্বপ্ন ছিল এমন একটি ভারত, যেখানে মানুষ স্বাধীন হবে চিন্তায়, কাজে ও মর্যাদায়।
আজ সেই স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব আমাদেরই।

চলুন, এই দিনে আবার উচ্চারণ করি—

“জয় হিন্দ!”
“তোমরা আমাদের স্বাধীনতা দিলে, আমরা তোমাদের অমরত্ব দেব।”

“Jai Hind!”

“If you give us freedom, we will give you immortality.”





More article :


Baba Harbajan sing duty life history


মঙ্গল গ্রহের বিশাল ক্ষতচিহ্ন — ভ্যালেস মেরিনারিস || The giant scar on Mars — Valles Marineris


স্ট্যান লারকিন মানব হৃদপিণ্ড ছাড়াই ৫৫৫ দিনের অবিশ্বাস্য জীবন | Stan Larkin's incredible life of 555 days without a human heart









 






 

Comments

Popular posts from this blog

A girl was having bangla golpo

  একটি মেয়ের বিবাহিত জীবনে প্রচুর অশান্তি হচ্ছিল সে কোনো ভাবেই |  A girl was having a lot of trouble in her married life English convert scroll 👇 Married life পরিবর্তনের শুরু নিজেকে বদলে দেওয়া থেকেই : তার স্বামীকে মেনে নিতে পারছিল না,মনের মধ্যে এতোটাই রাগ জন্মেছিল যে সে তার স্বামীকে খুন পর্যন্ত করতে চাইছে।  একদিন সকালে সে তার মায়ের কাছে গিয়ে বললো- “আমি আমার স্বামীকে নিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি,আমি আর তার বাজে কথা মেনে নিতে পারছি না। আমি তাকে খুন করতে চাই,কিন্তু আমি ভয়‌ পাচ্ছি যে দেশের আইন আমাকে দায়ী করবে। তুমি কি এই বিষয়ে আমাকে সাহায্য করতে পারো মা..??” bangla golpo মা উত্তর দিলেন- “হ্যাঁ, আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি। তবে তার আগে কয়েকটি কাজ আছে যা তোমাকে করতে হবে।” মেয়ে জিজ্ঞাসা করলো- “কি কাজ মা..?? আমি তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য যে কোনো কাজ করতে প্রস্তুত আছি।” মা বললেন- “ঠিক আছে, তাহলে শোনো:- ১. তোমাকে প্রথমেই তার সাথে খুব ভালোভাবে শান্তিতে কিছুদিন থাকতে হবে,যাতে সে মারা যাওয়ার পর কেউ তোমাকে সন্দেহ করতে না পারে। ২. তার কাছে সুন্দরী এবং আকর্ষণীয়া দেখাব...

Mandra was sitting bangla golpo

Mandra was sitting quietly in a corner of the hospital's black chair. She suddenly fainted ||হাসপাতালের কালো চেয়ারের এক কোণে চুপচাপ বসেছিল মন্দ্রা হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়ায় বেশি কিছু ভাবনা চিন্তা না করেই সে বাবাকে সামনের হাসপাতালে নিয়ে এসেছে| খানিক আগে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারল বাবার মাথায় ক্লট জমেছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশন করাতে হবে| এদিকে দিন আনি দিন খাই পরিবার, তার টিউশনের দু হাজার টাকাও পরিবারের কাছে অনেক| ষাট হাজার টাকা... অঙ্কটা তাদের মতো পরিবারের জন্য অনেক| দিন দুয়েকের মধ্যে তো দূর, বছরখানেকের মধ্যেও জোগাড় করতে পারবে কিনা সন্দেহ! রিসেপশন ডেস্কে বসা গোলাপি ইউনিফর্ম পরা মহিলার কাছ থেকে টাকার অঙ্কটা শোনার পরপরই মন্দ্রার মনে হল মাথায় আকাশ ভেঙে পড়া বোধহয় একেই বলে| এত টাকা জোগাড় করার সামর্থ্য নেই তার, তবে কি বাবা আর প্রাণে বাঁচবে না? মা কেমন ছিল ভাল করে মনেও নেই তার, অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করতে না পেরে তাকে ফেলে পালিয়েছে| বাবাই খেয়ে না খেয়ে পক্ষী মাতার মতো বুকে আগলে রেখেছিল এতদিন| কিন্তু বাবাই যদি তারাদের দেশে চলে যায়, একলা কিভাবে বাঁচবে মন্দ্রা? কথাটা ...

Pride is terrible bangla golpo

  যার ভালোবাসা গভীর তার অভিমান ভয়ংকর | He whose love is deep his pride is terriblehoop English convert scroll 👇 মানুষকে কখনও একা কাঁদার সময় দিতে নেই জানেন! একবার কেউ একা কাঁদতে শিখে গেলে, তার আর কারও প্রয়োজন হয় না।  -আগে জানতাম না, তবে এখন জানি। মেয়েদের অভিমান ভালোবাসার চেয়েও ভয়ংকর।  -আংশিক ভুল জানেন আপনি।  -সঠিকটা তবে জানিয়ে দিন।  -যার ভালোবাসা যত গভীর, তার অভিমান তত ভয়ংকর।  -আপনি বলছেন যখন, মেনে নিলাম।  -আপনার ভালোবাসতে ইচ্ছে করে না জ্যোতিষ্ক?  -করে তো! কিন্তু জীবনের সাময়িক উদ্দেশ্য পূরণের স্বার্থে এমন কিছু ব্যক্তিগত ক্ষতি হয়ে গেছে, যা আমি চাইলেও ফেরাতে পারব না। আপনার গল্প বলুন ম্যাডাম। যাঁরা ভালোবাসতে জানেন, তাঁদের কাছে ভালোবাসার গল্প শুনতে ভালো লাগে।  -আমি আর কী বলব? যখন মন ভুল পথনির্দেশ দেয়, তখন সঠিক পথে হাঁটার জন্য নিজের মনের বিরুদ্ধে যেতে হয়। আমিও গেছি, এখন একরকম ভালোই আছি।  -সত্যিই ভালো আছেন? কতটা ভালো আছেন? জানতে ইচ্ছে করে।  -ঠিক জানি না। কী পেয়েছি, কতটা হারিয়েছি, সেই হিসেব রাখি না। আজকাল নিজের ভালো থাকার চেয়েও, অন্যের ভাল...