Skip to main content

Even after being martyred baba Harbhajan Singh still serves on duty at the Indian border

 

শহীদ হওয়ার পরও বাবা হরভজন সিং এখনো ভারতের সীমান্তে ডিউটি দেন || Even after being martyred, father Harbhajan Singh still serves on duty at the Indian border


Harbhajan Singh




ভারতের সীমান্ত রক্ষাকারী সৈনিকদের মধ্যে একজনের নাম আজও কিংবদন্তির মতো উচ্চারিত হয়— বাবা হরভজন সিং। তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন সাহসী জওয়ান, যিনি মৃত্যুর পরও তাঁর কর্তব্য থেকে বিচ্যুত হননি। ভারতের সিকিম সীমান্তে আজও বিশ্বাস করা হয়, তিনি এখনো প্রহরারত আছেন। এই গল্প শুধু এক সৈনিকের নয়, এটি এক অনন্য আধ্যাত্মিক ও দেশপ্রেমের প্রতীক, যা কোটি ভারতীয়ের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন

বাবা হরভজন সিং-এর জন্ম ৩০ আগস্ট ১৯৪৬ সালে পাঞ্জাবের কাপুরথালা জেলার একটি ছোট গ্রামে। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন পরিশ্রমী, সৎ এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ। ভারতের স্বাধীনতার পরবর্তী সময়টায় সীমান্তে নানা সংঘাত চলছিল, আর সেই সময় দেশের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করার প্রবল ইচ্ছা থেকেই তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।

১৯৬৬ সালে তিনি পাঞ্জাব রেজিমেন্ট-এর সঙ্গে যুক্ত হন এবং পরে ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে কর্মরত হন। কঠোর শৃঙ্খলা, দায়িত্ববোধ এবং সহযোদ্ধাদের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার জন্য তিনি সকলের প্রিয় হয়ে ওঠেন।

সেই রহস্যময় দিন

১৯৬৮ সালের অক্টোবর মাসে হরভজন সিং সিকিমের নাথুলা পাস অঞ্চলে সীমান্ত প্রহরায় ছিলেন। এটি ভারত ও চীনের সীমান্ত, যেখানে আবহাওয়া অত্যন্ত প্রতিকূল। ৪,০০০ মিটারেরও বেশি উচ্চতায় বরফে ঢাকা এই এলাকা ছিল তাঁর দায়িত্বের জায়গা। একদিন টহলদারির সময় তিনি পা পিছলে বরফের গভীরে পড়ে যান। সহযোদ্ধারা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর দেহ খুঁজে পাননি।

তিন দিন পর তাঁর মৃতদেহ বরফের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়। সবাই ভেবেছিল, এখানেই শেষ তাঁর গল্প। কিন্তু এখান থেকেই শুরু হয় এক অলৌকিক অধ্যায়


Baba Harbhajan Singh



মৃত্যুর পরও কর্তব্যে অবিচল

সৈন্যদের ভাষ্যমতে, হরভজন সিং মৃত্যুর পর স্বপ্নে তাঁর সহযোদ্ধাদের কাছে এসে বলেন, “আমার দেহ এই জায়গায় আছে, আমাকে উদ্ধার করো এবং আমার জিনিসপত্র যথাযথভাবে সেনা সদর দফতরে পাঠাও।” আশ্চর্যের বিষয়, পরদিন ঠিক সেই জায়গা থেকেই তাঁর দেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর থেকে সৈন্যদের বিশ্বাস জন্মে— হরভজন সিং এখনো তাঁদের সঙ্গে আছেন।

সেই সময় থেকেই তাঁকে সবাই “বাবা হরভজন সিং” নামে সম্মান জানাতে শুরু করে। সেনারা বিশ্বাস করেন, তাঁর আত্মা এখনো সীমান্তে টহল দেন এবং বিপদের সময় তাঁদের আগাম সতর্ক করেন। বহু সৈন্য জানিয়েছেন, তাঁরা স্বপ্নে বাবাকে দেখেছেন— কখনও বিপদের খবর দিচ্ছেন, কখনও পরামর্শ দিচ্ছেন।


Baba Harbhajan Singh


সেনাবাহিনীর মধ্যে এক অনন্য প্রথা

ভারতীয় সেনাবাহিনীও এই বিশ্বাসকে সম্মান জানায়। সিকিমের নাথুলা অঞ্চলে বাবা হরভজন সিং-এর একটি মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে, যা “বাবা মন্দির” নামে পরিচিত। এখানে প্রতিদিন প্রহরীরা তাঁর নামে সালাম দেন, খাবার ও পানি রাখেন, এবং তাঁর “দায়িত্ব পোস্ট” প্রতীকীভাবে পালন করা হয়।

আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো— প্রতিদিন সকালে তাঁর জন্য ইউনিফর্ম ইস্ত্রি করা হয়, জুতো পরিষ্কার করে রাখা হয়, এবং খাবার পরিবেশন করা হয়। সৈন্যরা বলেন, জুতোগুলো মাঝে মাঝে কাদা মাখা অবস্থায় পাওয়া যায়— যেন রাতে তিনি সত্যিই বাইরে টহল দিয়েছেন!


Baba harbajan sing


বার্ষিক ছুটি ও বিশেষ প্রথা

আরেকটি বিশেষ প্রথা হলো, প্রতি বছর অক্টোবর মাসে বাবা হরভজন সিং-এর “ছুটি” দেওয়া হয়। তাঁর নামে ট্রেনে করে একটি আসন সংরক্ষিত থাকে— যেন তিনি বাড়ি যাচ্ছেন। ট্রেনে তাঁর ইউনিফর্ম, জুতো, ব্যাগ এবং ব্যক্তিগত সামগ্রী নিয়ে যাওয়া হয়। সৈন্যরা মনে করেন, এটি তাঁর আত্মার বিশ্রামের সময়।

তাঁর নিজ গ্রামে পৌঁছে মানুষ পূর্ণ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় তাঁর আত্মাকে স্বাগত জানায়। এরপর নির্ধারিত সময় শেষে আবার সেই ট্রেনেই তাঁর জিনিসপত্র ফিরিয়ে আনা হয়। এমন দৃশ্য পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের সেনাবাহিনীতে দেখা যায় না।

বিশ্বাস ও বাস্তবতার সংমিশ্রণ

অনেকে এই ঘটনাকে কেবল কুসংস্কার বলে উড়িয়ে দিতে পারেন। কিন্তু ভারতীয় সেনাদের জন্য এটি শুধু বিশ্বাস নয়, বরং এক ধরণের মানসিক শক্তি। সীমান্তে তীব্র ঠান্ডা, জীবন-মৃত্যুর ঝুঁকির মধ্যে এই বিশ্বাস তাঁদের মনে সাহস জোগায়।

সেনাদের মধ্যে এমন ধারণা আছে— যদি কেউ সীমান্তে দায়িত্বে অবহেলা করে, বাবা হরভজন সিং তাঁর স্বপ্নে এসে সতর্ক করেন। আবার বিপদের সময় আগাম সংকেত দেন। অনেক উচ্চপদস্থ অফিসারও বলেছেন, তাঁর “অদৃশ্য উপস্থিতি” তাঁরা অনুভব করেছেন।

পর্যটকদের আকর্ষণস্থল

আজকের দিনে বাবা মন্দির শুধু সেনাদের বিশ্বাসের প্রতীক নয়, এটি সিকিমের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। হাজারো মানুষ সেখানে যান, সেনা প্রহরীদের মতোই প্রার্থনা করেন, আশীর্বাদ চান। কেউ কেউ বলেন, এখানে প্রার্থনা করলে ইচ্ছা পূরণ হয়।

নাথুলা পাসের কাছের এই মন্দিরে প্রতিদিন সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, পূজা, ও স্যালুট অনুষ্ঠান হয়। পর্যটকরা যখন এটি দেখেন, তাঁদের চোখে জল এসে যায়— একজন শহীদ সৈনিক মৃত্যুর পরও কীভাবে দেশের সেবা করে যাচ্ছেন!


Harbhajan Singh


এক অনন্ত প্রেরণার প্রতীক

বাবা হরভজন সিং শুধু একজন শহীদ নন— তিনি ভারতীয় সেনার আত্মা, দেশের প্রতি অটুট নিষ্ঠা ও কর্তব্যবোধের প্রতীক। তাঁর গল্প আমাদের শেখায়, সত্যিকারের দেশপ্রেম মৃত্যুতে থেমে যায় না।

আজও ভারত-চীন সীমান্তে যখন তুষার ঝরছে, বাতাস হু হু করে বইছে, তখনও বিশ্বাস করা হয়— কোথাও না কোথাও, বরফের ছায়ায় দাঁড়িয়ে আছেন বাবা হরভজন সিং, দেশের সুরক্ষায় নিরলস প্রহরায়।

শেষকথা:
হরভজন সিং-এর জীবন ও মৃত্যুর গল্প কেবল এক সৈনিকের কাহিনি নয়, এটি ভারতের সীমান্তে কর্তব্য, বিশ্বাস এবং আধ্যাত্মিক শক্তির মিশ্রণ। তিনি দেখিয়েছেন, দেশপ্রেম কেবল বেঁচে থাকলে নয়, মৃত্যুর পরেও দেশের মাটির সঙ্গে একাত্ম হয়ে থাকে। তাই তাঁকে আজও সবাই শ্রদ্ধাভরে “বাবা” বলে ডাকে— শহীদ, যিনি মৃত্যুর পরও ডিউটি দেন ভারতের সীমান্তে।



More article :


হেমেন্দ্র মোহন বসু এক বিস্মৃত নবজাগরণের নায়ক | Hemendra Mohan Bose is a forgotten hero of the Renaissance



Netaji subhash Chandra bose azad hind fauz



Comments

Popular posts from this blog

A girl was having bangla golpo

  একটি মেয়ের বিবাহিত জীবনে প্রচুর অশান্তি হচ্ছিল সে কোনো ভাবেই |  A girl was having a lot of trouble in her married life English convert scroll 👇 Married life পরিবর্তনের শুরু নিজেকে বদলে দেওয়া থেকেই : তার স্বামীকে মেনে নিতে পারছিল না,মনের মধ্যে এতোটাই রাগ জন্মেছিল যে সে তার স্বামীকে খুন পর্যন্ত করতে চাইছে।  একদিন সকালে সে তার মায়ের কাছে গিয়ে বললো- “আমি আমার স্বামীকে নিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি,আমি আর তার বাজে কথা মেনে নিতে পারছি না। আমি তাকে খুন করতে চাই,কিন্তু আমি ভয়‌ পাচ্ছি যে দেশের আইন আমাকে দায়ী করবে। তুমি কি এই বিষয়ে আমাকে সাহায্য করতে পারো মা..??” bangla golpo মা উত্তর দিলেন- “হ্যাঁ, আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি। তবে তার আগে কয়েকটি কাজ আছে যা তোমাকে করতে হবে।” মেয়ে জিজ্ঞাসা করলো- “কি কাজ মা..?? আমি তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য যে কোনো কাজ করতে প্রস্তুত আছি।” মা বললেন- “ঠিক আছে, তাহলে শোনো:- ১. তোমাকে প্রথমেই তার সাথে খুব ভালোভাবে শান্তিতে কিছুদিন থাকতে হবে,যাতে সে মারা যাওয়ার পর কেউ তোমাকে সন্দেহ করতে না পারে। ২. তার কাছে সুন্দরী এবং আকর্ষণীয়া দেখাব...

Mandra was sitting bangla golpo

Mandra was sitting quietly in a corner of the hospital's black chair. She suddenly fainted ||হাসপাতালের কালো চেয়ারের এক কোণে চুপচাপ বসেছিল মন্দ্রা হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়ায় বেশি কিছু ভাবনা চিন্তা না করেই সে বাবাকে সামনের হাসপাতালে নিয়ে এসেছে| খানিক আগে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারল বাবার মাথায় ক্লট জমেছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশন করাতে হবে| এদিকে দিন আনি দিন খাই পরিবার, তার টিউশনের দু হাজার টাকাও পরিবারের কাছে অনেক| ষাট হাজার টাকা... অঙ্কটা তাদের মতো পরিবারের জন্য অনেক| দিন দুয়েকের মধ্যে তো দূর, বছরখানেকের মধ্যেও জোগাড় করতে পারবে কিনা সন্দেহ! রিসেপশন ডেস্কে বসা গোলাপি ইউনিফর্ম পরা মহিলার কাছ থেকে টাকার অঙ্কটা শোনার পরপরই মন্দ্রার মনে হল মাথায় আকাশ ভেঙে পড়া বোধহয় একেই বলে| এত টাকা জোগাড় করার সামর্থ্য নেই তার, তবে কি বাবা আর প্রাণে বাঁচবে না? মা কেমন ছিল ভাল করে মনেও নেই তার, অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করতে না পেরে তাকে ফেলে পালিয়েছে| বাবাই খেয়ে না খেয়ে পক্ষী মাতার মতো বুকে আগলে রেখেছিল এতদিন| কিন্তু বাবাই যদি তারাদের দেশে চলে যায়, একলা কিভাবে বাঁচবে মন্দ্রা? কথাটা ...

Pride is terrible bangla golpo

  যার ভালোবাসা গভীর তার অভিমান ভয়ংকর | He whose love is deep his pride is terriblehoop English convert scroll 👇 মানুষকে কখনও একা কাঁদার সময় দিতে নেই জানেন! একবার কেউ একা কাঁদতে শিখে গেলে, তার আর কারও প্রয়োজন হয় না।  -আগে জানতাম না, তবে এখন জানি। মেয়েদের অভিমান ভালোবাসার চেয়েও ভয়ংকর।  -আংশিক ভুল জানেন আপনি।  -সঠিকটা তবে জানিয়ে দিন।  -যার ভালোবাসা যত গভীর, তার অভিমান তত ভয়ংকর।  -আপনি বলছেন যখন, মেনে নিলাম।  -আপনার ভালোবাসতে ইচ্ছে করে না জ্যোতিষ্ক?  -করে তো! কিন্তু জীবনের সাময়িক উদ্দেশ্য পূরণের স্বার্থে এমন কিছু ব্যক্তিগত ক্ষতি হয়ে গেছে, যা আমি চাইলেও ফেরাতে পারব না। আপনার গল্প বলুন ম্যাডাম। যাঁরা ভালোবাসতে জানেন, তাঁদের কাছে ভালোবাসার গল্প শুনতে ভালো লাগে।  -আমি আর কী বলব? যখন মন ভুল পথনির্দেশ দেয়, তখন সঠিক পথে হাঁটার জন্য নিজের মনের বিরুদ্ধে যেতে হয়। আমিও গেছি, এখন একরকম ভালোই আছি।  -সত্যিই ভালো আছেন? কতটা ভালো আছেন? জানতে ইচ্ছে করে।  -ঠিক জানি না। কী পেয়েছি, কতটা হারিয়েছি, সেই হিসেব রাখি না। আজকাল নিজের ভালো থাকার চেয়েও, অন্যের ভাল...