Skip to main content

Karma is the power of the past and the lessons of the present

কর্মফল অতীতের শক্তি ও বর্তমানের শিক্ষা | Karma is the power of the past and the lessons of the present





মানবিকতার চোখে কুরুক্ষেত্র ও ঈশ্বরদীর কুকুর শাবক ঘটনা

কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শেষ। সর্বনাশা রণক্ষেত্রে নীরবতা নেমে এসেছে। ঘরে ঘরে হলো শোক, মায়েরা হারাল সন্তান, স্ত্রীরা হারাল স্বামী, আর একটি জনপদ পেল ধ্বংসের চিহ্ন। সেই সময়ে শোকহতব্যস্ত রাজমাতা গান্ধারী শ্রীকৃষ্ণের সামনে এসে দাঁড়ালেন। তাঁর চোখে অন্ধকার, কিন্তু মনের ব্যথা আরও গভীর। তাঁর প্রশ্নটি আজও যুগে যুগে মানুষের মনে একইভাবে ধাক্কা দেয়।


গান্ধারীর প্রশ্ন ছিল সোজা এবং তীব্র—

“আমি তো এই জন্মে কোনো পাপ করিনি। তাহলে আমাকে এই নরক যন্ত্রণা কেন ভোগ করতে হলো?”


শ্রীকৃষ্ণের উত্তরের মধ্যে ছিল ধ্রুব সত্য।

“হে দেবী, এই জন্মে না করলেও বহু জন্ম আগের কর্মই এই জীবনে ফল দেয়। শত প্রজাপতির চোখে কাঁটা ঢুকিয়ে যে নিষ্ঠুর খেলা আপনি কৈশোরে করেছিলেন, আজ সেই পাপের ফলেই আপনি অন্ধ স্বামী পেয়েছেন এবং সন্তান হারানোর বেদনা বরণ করেছেন। সেই শত প্রজাপতিই আজ আপনার সন্তান হয়ে জন্মেছে, এবং যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ হারিয়ে তারা আপনাকে সেই যন্ত্রণা ফিরিয়ে দিয়েছে।”


এই কথায় গান্ধারী স্তব্ধ হয়ে যান।

আমরা কি সত্যিই বুঝি, এক জন্মের ভুল অন্য জন্মের অশ্রু হয়ে ফিরে আসে?


শুধু গান্ধারী নন। ধৃতরাষ্ট্রও শ্রীকৃষ্ণকে প্রশ্ন করেন—

“আমি কোন পাপে জন্মান্ধ হলাম এবং শত সন্তানের মৃত্যু দেখলাম?”


কৃষ্ণ জানান তাঁর অতীতের নরহত্যার ইতিহাস—

এক বর্ষার রাতে রাজা থাকাকালীন তিনি আশ্রয়ের জন্য গাছে উঠেছিলেন। সেই গাছে থাকা শুক পাখি দম্পতি অতিথিসেবায় প্রাণ বিসর্জন দেয়। অথচ তিনি লোভে পড়ে সেই অসহায় পাখি ও তাদের শত বাচ্চাকে হত্যা করে খেয়েছিলেন। এবং সেই পাপ বহু জন্ম পর ফিরে আসে সন্তান হারানোর যন্ত্রণা হয়ে।


এই মহাভারতের ছোট্ট পর্ব মানব সমাজের এক গভীরতম সত্যকে সামনে আনে —

কর্মফল অবশ্যম্ভাবী।

পাপ কখনো হারিয়ে যায় না।

সুযোগ পেলেই ফিরে আসে শাস্তির রূপ নিয়ে।



-

Sri krishna


আধুনিক সমাজের কুরুক্ষেত্র


আজকের পৃথিবীতে আমরা নিজেদের সভ্য বলে দাবি করি। স্মার্টফোন, ইন্টারনেট, বিজ্ঞান ও উন্নত প্রযুক্তি আমাদের অগ্রসর করেছে বটে, কিন্তু আমাদের মনুষ্যত্ব কি সেই গতিতে এগোতে পেরেছে?


একটু খেয়াল করলেই দেখা যায়, আমাদের অজ্ঞতা, নিষ্ঠুরতা আজও বেঁচে আছে।

পাখির বাসা ভাঙা, কুকুরছানা মারা, পশুদের নিগৃহীত করা— এসব যেন বিনোদন।

শিশুরা শখ করে পিঁপড়া পোড়ায়, বিড়ালদের পাথর ছোঁড়ে, পোষা কুকুর খাওয়া খাবার ছুঁড়ে দূরে ফেলে হাসে।

বড়রা তা দেখেও চুপ থাকে। কারণ আমরা ভাবি —

“প্রাণী তো, এর কী মূল্য?”


কিন্তু সেই প্রাণীই আবার আগামী জন্মে আমাদের সন্তান হয়ে জন্মাতে পারে, আমাদের চোখের সামনে হারিয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা নিয়ে।




ঈশ্বরদীর কুকুরশাবক হত্যা: আরেকটি নির্মম গল্প


পাবনার ঈশ্বরদীতে মাত্র কয়েকদিন আগে ৮টি নিরীহ কুকুর শাবককে বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে হত্যা করা হয়েছে।

শ্বাস নিতে পারেনি তারা, একটু আলো দেখার আগেই তাদের জীবন নিভে গেছে।


প্রশ্ন হলো —

এই নিষ্ঠুরতার পুরস্কার আমরা কোন জন্মে পাব?

কুকুরের কান্না কি আকাশ ভেদ করে না?

প্রকৃতি কি কোনদিন হিসাব ভুল করে?


যে সমাজে দুর্বলতম প্রাণকেও বাঁচতে দেওয়া হয় না, সেই সমাজ নিজের ভবিষ্যৎও ধ্বংস করে। কারণ,

অপরের ওপর করা যন্ত্রণা নিজের পথে ফিরে আসবেই।



কর্মফলের বিজ্ঞান


কেউ কেউ বলেন, কর্মফল কেবল ধর্মীয় কল্পকাহিনি।

কিন্তু মনোবিজ্ঞান বলে —

ব্যক্তির ভুল ও নিষ্ঠুরতা তার জীবনে মানসিক ক্ষত তৈরি করে, যা ভবিষ্যৎ কর্ম ও সিদ্ধান্তে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

সমাজবিজ্ঞান বলে —

যে সম্প্রদায় প্রাণী বা দুর্বলের ওপর অত্যাচার করে, সেখানে সহিংসতা ও অপরাধ দ্রুত বাড়তে থাকে।

প্রকৃতি বলে —

যে প্রজাতি অন্য সত্ত্বাকে ধ্বংস করে, প্রকৃতি তাকে শাস্তি দেয়।


ধর্ম, বিজ্ঞান ও প্রকৃতি — তিনেই একই শিক্ষা দেয়

কর্মের ফল এড়ানো যায় না।






মানবিকতার শিক্ষা


কৃষ্ণ গান্ধারীকে দুটি শিক্ষা দেন —


১) অজ্ঞতা পাপ নয়, নিষ্ঠুরতা পাপ

ছোটবেলার খেলাও যদি অন্যের প্রাণহানি ঘটায়, সেটি পাপ।


২) মানুষের চোখ থাকলেও হৃদয় অন্ধ হতে পারে

গান্ধারী চোখ বেঁধেছিলেন স্বামীকে সমান ভাগ দিতে গিয়ে, কিন্তু সেই চোখ বেঁধে থাকা তাকে সত্য অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে।


ঠিক তেমনি আমরা চোখে আলো নিয়ে বাস করি, কিন্তু অসহায় প্রাণীর আর্তি বুঝি না।

এটাই হৃদয়ের অন্ধত্ব।




কেন আজ এই গল্পটি গুরুত্বপূর্ণ?


কারণ আজও আমরা সেই কুরুক্ষেত্রের ভিতরেই আছি। যুদ্ধ নেই, কিন্তু হিংসা আছে।

রথ নেই, কিন্তু নিষ্ঠুরের অহংকার আছে।

তীর আছে, কিন্তু তা এখন প্রযুক্তির অপব্যবহার, মানুষের ক্ষতি, প্রাণীর ওপর অমানবিকতা।


এই গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয় —


কর্মের বীজ আজ বপন করলে, ফল আগামী জন্মে ফুটবে।

আজ ক্ষত করলে, কাল রক্ত ঝরবেই।


Krishna kurukhetra




আমরা কী করতে পারি?


১) সন্তানদের শেখাতে হবে —

প্রাণ মানেই জীবন, খেলনা নয়।


২) পাড়া-মহল্লায় প্রাণীর বিরুদ্ধে সহিংসতা দেখলে প্রতিবাদ করতে হবে।


৩) সচেতন হতে হবে —

প্রতিটি প্রাণ বাঁচার অধিকার নিয়ে জন্মায়।


৪) ধর্ম শুধু মন্দির-মসজিদে নয় —

দুর্বলকে রক্ষা করাই প্রকৃত ধর্ম।



-


উপসংহার


শ্রীকৃষ্ণ সেদিন গান্ধারীকে বলেছিলেন —

পাপ করতে দেরি হয় না, কিন্তু পাপফল পেতে সময় লাগে।


ঈশ্বরদীর সেই ৮টি কুকুরশাবকের আর্তনাদ আমাদের বিবেকের সামনে আঘাত হানে।

আমরা কি অপেক্ষা করব, কখন সেই পাপফল ফিরে এসে আমাদের কাঁদাবে?

নাকি আজই বদলে দেব আমাদের আচরণ, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি?


প্রকৃতি কোনোদিন হিসাব ভুল করে না।

একদিন সবাই নিজের কর্মফলের সামনে দাঁড়াতে বাধ্য হবে।


তাই এখনই সময় —

মানুষ হিসেবে মানুষ হওয়া

আর জীবনের প্রতি সামান্য সম্মান দেখানো।



বাঁকানো ব্যারেলের অদ্ভুত বন্দুক – Krummlauf: যুদ্ধক্ষেত্রে উদ্ভাবনের এক বিচিত্র অধ্যায়



সফল জীবন কাকে বলে ঘুড়ির গল্পে জীবনদর্শন | What is a successful life Philosophy of life in the story of the kite



কলকাতা ইতিহাস, সংস্কৃতি, পরিবহন ও দুর্গাপূজোর শহর | Kolkata History and Culture Full Guide




Comments

Popular posts from this blog

A girl was having bangla golpo

  একটি মেয়ের বিবাহিত জীবনে প্রচুর অশান্তি হচ্ছিল সে কোনো ভাবেই |  A girl was having a lot of trouble in her married life English convert scroll 👇 Married life পরিবর্তনের শুরু নিজেকে বদলে দেওয়া থেকেই : তার স্বামীকে মেনে নিতে পারছিল না,মনের মধ্যে এতোটাই রাগ জন্মেছিল যে সে তার স্বামীকে খুন পর্যন্ত করতে চাইছে।  একদিন সকালে সে তার মায়ের কাছে গিয়ে বললো- “আমি আমার স্বামীকে নিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি,আমি আর তার বাজে কথা মেনে নিতে পারছি না। আমি তাকে খুন করতে চাই,কিন্তু আমি ভয়‌ পাচ্ছি যে দেশের আইন আমাকে দায়ী করবে। তুমি কি এই বিষয়ে আমাকে সাহায্য করতে পারো মা..??” bangla golpo মা উত্তর দিলেন- “হ্যাঁ, আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি। তবে তার আগে কয়েকটি কাজ আছে যা তোমাকে করতে হবে।” মেয়ে জিজ্ঞাসা করলো- “কি কাজ মা..?? আমি তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য যে কোনো কাজ করতে প্রস্তুত আছি।” মা বললেন- “ঠিক আছে, তাহলে শোনো:- ১. তোমাকে প্রথমেই তার সাথে খুব ভালোভাবে শান্তিতে কিছুদিন থাকতে হবে,যাতে সে মারা যাওয়ার পর কেউ তোমাকে সন্দেহ করতে না পারে। ২. তার কাছে সুন্দরী এবং আকর্ষণীয়া দেখাব...

Mandra was sitting bangla golpo

Mandra was sitting quietly in a corner of the hospital's black chair. She suddenly fainted ||হাসপাতালের কালো চেয়ারের এক কোণে চুপচাপ বসেছিল মন্দ্রা হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়ায় বেশি কিছু ভাবনা চিন্তা না করেই সে বাবাকে সামনের হাসপাতালে নিয়ে এসেছে| খানিক আগে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারল বাবার মাথায় ক্লট জমেছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশন করাতে হবে| এদিকে দিন আনি দিন খাই পরিবার, তার টিউশনের দু হাজার টাকাও পরিবারের কাছে অনেক| ষাট হাজার টাকা... অঙ্কটা তাদের মতো পরিবারের জন্য অনেক| দিন দুয়েকের মধ্যে তো দূর, বছরখানেকের মধ্যেও জোগাড় করতে পারবে কিনা সন্দেহ! রিসেপশন ডেস্কে বসা গোলাপি ইউনিফর্ম পরা মহিলার কাছ থেকে টাকার অঙ্কটা শোনার পরপরই মন্দ্রার মনে হল মাথায় আকাশ ভেঙে পড়া বোধহয় একেই বলে| এত টাকা জোগাড় করার সামর্থ্য নেই তার, তবে কি বাবা আর প্রাণে বাঁচবে না? মা কেমন ছিল ভাল করে মনেও নেই তার, অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করতে না পেরে তাকে ফেলে পালিয়েছে| বাবাই খেয়ে না খেয়ে পক্ষী মাতার মতো বুকে আগলে রেখেছিল এতদিন| কিন্তু বাবাই যদি তারাদের দেশে চলে যায়, একলা কিভাবে বাঁচবে মন্দ্রা? কথাটা ...

Pride is terrible bangla golpo

  যার ভালোবাসা গভীর তার অভিমান ভয়ংকর | He whose love is deep his pride is terriblehoop English convert scroll 👇 মানুষকে কখনও একা কাঁদার সময় দিতে নেই জানেন! একবার কেউ একা কাঁদতে শিখে গেলে, তার আর কারও প্রয়োজন হয় না।  -আগে জানতাম না, তবে এখন জানি। মেয়েদের অভিমান ভালোবাসার চেয়েও ভয়ংকর।  -আংশিক ভুল জানেন আপনি।  -সঠিকটা তবে জানিয়ে দিন।  -যার ভালোবাসা যত গভীর, তার অভিমান তত ভয়ংকর।  -আপনি বলছেন যখন, মেনে নিলাম।  -আপনার ভালোবাসতে ইচ্ছে করে না জ্যোতিষ্ক?  -করে তো! কিন্তু জীবনের সাময়িক উদ্দেশ্য পূরণের স্বার্থে এমন কিছু ব্যক্তিগত ক্ষতি হয়ে গেছে, যা আমি চাইলেও ফেরাতে পারব না। আপনার গল্প বলুন ম্যাডাম। যাঁরা ভালোবাসতে জানেন, তাঁদের কাছে ভালোবাসার গল্প শুনতে ভালো লাগে।  -আমি আর কী বলব? যখন মন ভুল পথনির্দেশ দেয়, তখন সঠিক পথে হাঁটার জন্য নিজের মনের বিরুদ্ধে যেতে হয়। আমিও গেছি, এখন একরকম ভালোই আছি।  -সত্যিই ভালো আছেন? কতটা ভালো আছেন? জানতে ইচ্ছে করে।  -ঠিক জানি না। কী পেয়েছি, কতটা হারিয়েছি, সেই হিসেব রাখি না। আজকাল নিজের ভালো থাকার চেয়েও, অন্যের ভাল...