Skip to main content

Why did Bhishma wait until Makar Sankranti to die

 

শরশয্যায় ৫৮ দিন কেন মৃত্যুর জন্য মকর সংক্রান্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলেন ভীষ্ম? 58 days in bed: Why did Bhishma wait until Makar Sankranti to die?




মহাভারতের বিস্তৃত কাহিনিতে বহু চরিত্র আছেন, যাঁদের অবদান, বীরত্ব, জ্ঞান ও আত্মত্যাগ ভারতীয় সভ্যতার শাশ্বত স্মারক। কিন্তু ভীষ্ম পিতামহ—এমন এক চরিত্র যাঁর জীবন ও মৃত্যু বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। রাজনীতি, নৈতিকতা, পিতৃভক্তি, ব্রহ্মচর্য, বীরত্ব—সবই তাঁকে মহাভারতের সর্বাধিক বিদগ্ধ ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেয়।
কিন্তু তাঁর জীবনের সবচেয়ে রহস্যময় অধ্যায় সম্ভবত শরশয্যায় ৫৮ দিনের অপেক্ষা। অসংখ্য তীক্ষ্ণ তীর শরীরে বিদ্ধ, অস্থিমজ্জা পর্যন্ত বেদনার্ত শরীর—তবু ভীষ্ম মৃত্যুর আহ্বান গ্রহণ করেননি। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শেষেও তিনি নিঃশব্দে অপেক্ষা করে ছিলেন। কিসের জন্য? কেন এত যন্ত্রণা সহ্য করে জীবনের শেষ দিনগুলো রণক্ষেত্রেই কাটালেন তিনি?

চলুন ইতিহাস, ধর্মশাস্ত্র ও আধ্যাত্মিক বিশ্বাস মিলিয়ে খুঁজে দেখি এই রহস্যের উত্তর।




ভীষ্মের জন্ম ও অপার প্রতিভা

ভীষ্মের জন্মের কাহিনি নিজেই অসাধারণ চমকপ্রদ। তাঁর জন্মগাঁথা জড়িত দেবী গঙ্গার সঙ্গে। দেবব্রত নামে তাঁর জন্ম—মহারাজ শান্তনু ও দেবী গঙ্গার পুত্র তিনি। জন্মের পর থেকেই বিশেষ প্রত্যাশা ছিল এই পুত্রকে কেন্দ্র করে।

ছোটবেলা থেকেই:

বেদ-শাস্ত্র শিক্ষা


যুদ্ধকৌশল, তিরন্দাজি ও দ্রোণবিদ্যা
এতে অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেন তিনি।
পরশুরামের মতো মহান গুরু তাঁকে অস্ত্রচর্চায় প্রশিক্ষণ দেন। তাঁর প্রতিভা দেখে শান্তনু তাঁকে হস্তিনাপুরের ভবিষ্যৎ রাজা হিসেবে ঘোষণা করেন।


কিন্তু মহাকাব্যের পথচিত্র তখনও শুরু হয়নি…




‘ভীষ্ম’ প্রতিজ্ঞা — যা বদলে দেয় ইতিহাস

শান্তনু সত্যবতীর প্রেমে পড়লে রাজনীতি ও রাজ্যের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। সত্যবতীর পিতা শর্ত দেন—
সত্যবতীর পুত্রই হবে রাজা

তখনই দেবব্রত অসম্ভব এক শপথ নেন:

আজীবন ব্রহ্মচর্য পালন


কোনওদিন সিংহাসনের অধিকার দাবি করবেন না


এই প্রতিজ্ঞা এতই কঠোর, এতই অকল্পনীয় যে দেবব্রত তখন থেকেই ভীষ্ম নামে পরিচিত হন—
যে প্রতিজ্ঞা ভীতিপ্রদ, ভাঙা অসম্ভব।

এই আত্মত্যাগের বদলে শান্তনু তাঁকে একটি অমূল্য বর দেন —

“ইচ্ছামৃত্যুর বর”

বিশ্বের কোনও শক্তি তাঁর ইচ্ছা ছাড়া তাঁকে মৃত্যুবরণ করাতে পারবে না।

কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ: বীরের বেদনা

কুরুক্ষেত্রের মহাযুদ্ধে ভীষ্ম কৌরবদের পক্ষ নিয়েছিলেন, যদিও ন্যায়ের পথে ছিলেন পাণ্ডবেরা। কারণ, ভীষ্ম ছিলেন হস্তিনাপুরের প্রতি অনুগত, সিংহাসন যাঁর, দায়িত্ব তাঁরই প্রতি।

যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁর বীরত্ব ছিল তুলনাহীন—

একাই হাজার হাজার সৈন্যকে পরাস্ত করেছেন


অর্জুনের মতো ধুরন্ধর যোদ্ধাকে পর্যন্ত ভয় ধরিয়ে দিতে পারতেন


পাণ্ডবরা বারবার ভেঙে পড়ছিলেন


কিন্তু শিখণ্ডীর বিরুদ্ধে ভীষ্ম অস্ত্র তুলবেন না—এটাই ছিল তাঁর প্রতিজ্ঞা। শিখণ্ডীকে সামনে রেখে অর্জুন তীরবৃষ্টি শুরু করেন। সারা শরীর তীরের ফলায় বিদ্ধ হয়ে ভীষ্ম পড়েন শরশয্যায়




তাহলে প্রশ্ন, কেন মৃত্যুকে অবিলম্বে গ্রহণ করলেন না ভীষ্ম?

শরীরে অগণিত তীর, অচিন্তনীয় ব্যথা—তবুও ৫৮ দিন অপেক্ষা!

এ অপেক্ষা ছিল না দুর্বলতার
এ ছিল আত্মজয়ের বিজয়
এ ছিল ধর্ম ও আধ্যাত্মিক সাধনার প্রতিচ্ছবি

সূর্যের দুই পথ — উত্তরায়ন ও দক্ষিণায়ন

প্রাচীন ভারতীয় জ্যোতিষ ও ধর্মশাস্ত্রে বলা হয়:

বছরে দুই চক্রে সূর্য চলাচল করে


দক্ষিণায়ন → সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধে, দেবতাদের রাত


উত্তরায়ন → সূর্য উত্তর গোলার্ধে, দেবতাদের দিন


ধর্মশাস্ত্রে বিশ্বাস:

উত্তরায়নে মৃত্যু → মোক্ষলাভ বা জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি


দক্ষিণায়নে মৃত্যু → পুনর্জন্মের পথে ফিরে আসা


কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ চলছিল দক্ষিণায়নে।
তাই ভীষ্ম অপেক্ষা করলেন —
কবে আসবে মকর সংক্রান্তি, কখন শুরু হবে উত্তরায়ন

কেবল মুক্তির জন্যই নয়…

ভীষ্ম অপেক্ষা করেছিলেন যুদ্ধোত্তর রাষ্ট্রনীতির স্থিতি নিশ্চিত করতে— ✔ দৃষ্টিহীন হলেও বিদুর, ধৃতরাষ্ট্রকে উপদেশ দেন
✔ শোকে ভেঙে পড়া যুধিষ্ঠিরকে শিক্ষা দিয়ে রাজ্যপথে ফিরিয়ে আনেন
✔ ন্যায়নীতি, রাজধর্ম, আচার–বিচার—সব শেখান নতুন রাজাকে

তাঁর জীবনযুদ্ধের শেষ চেষ্টা ছিল: ধর্মের সঠিক পুনর্নির্মাণ




যুধিষ্ঠিরের সঙ্গে ধর্মালোচনা — “শান্তি পার্ব” ও “অনুশাসন পার্ব”

মহাভারতে যুদ্ধ-পরবর্তীতে দীর্ঘসময় ভীষ্ম শয্যায় অবস্থান করে যুধিষ্ঠিরকে রাজধর্ম শেখান।
তারই ফল— শান্তি পার্ব
অনুশাসন পার্ব

এই অংশগুলো:

শাসনব্যবস্থা


ন্যায়নীতি


নৈতিক জীবনযাপন


রাজা-প্রজার সম্পর্ক
—এসবের বিশ্বকোষ বলা যায়।


যদি ভীষ্ম যুদ্ধের দিনই মৃত্যুবরণ করতেন —
মহাভারত হতো অসম্পূর্ণ
আর ভারতীয় নৈতিকতা হারাত তার সবচেয়ে বড় শিক্ষা




মৃত্যুর পরম মুহূর্ত — মোক্ষলাভের প্রসাদ

অবশেষে আসে মকর সংক্রান্তি…
সূর্য প্রবেশ করে উত্তরায়নে
দেবতাদের দিন শুরু হয়

তখনই ভীষ্ম স্থির করেন:

“এবার কর্মফল সমর্পণের সময়।”


তীরের বিছানা থেকে মুক্ত হয়ে
চিরবিদায় নেন তিনি
শান্ত, দীপ্ত, কল্যাণময় পরিণতি

ধর্ম ও সত্যরক্ষার যোদ্ধা
অবশেষে মোক্ষ প্রাপ্ত হন

ভীষ্মের জীবনের মূল শিক্ষা

শিক্ষাঅর্থপ্রতিজ্ঞার দৃঢ়তাকথাই চরিত্র ও ব্যক্তিত্বের প্রতিচ্ছবিন্যায়নিষ্ঠাদুর্বলের পক্ষে থাকা নয়, ধর্ম অনুসরণ করাআত্মত্যাগব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে রাষ্ট্রের কল্যাণমৃত্যুকেও বশ করাইচ্ছাশক্তিই জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ বল

শেষকথা

ভীষ্মের জীবন শুধু যুদ্ধ বা শাসনের গল্প নয়—
এ হল ধর্মের প্রতি আনুগত্যের মহাকাব্য

শরশয্যায় শুয়েও তাঁর উদ্দেশ্য অটুট ছিল—
ধর্মের সুরক্ষা, রাষ্ট্রের কল্যাণ, এবং মুক্তির মহা-প্রস্তুতি।

তাই আজও তিনি মানবসভ্যতাকে শেখান—
শরীর মরে, প্রতিজ্ঞা নয়
যুদ্ধ শেষ হয়, ধর্ম নয়
জীবন ফুরোয়, আদর্শ নয়

ভীষ্ম পিতামহ তাই অমর,
তাঁর মৃত্যু নয়— মোক্ষের জয়যাত্রা



More article 


বাঁকানো ব্যারেলের অদ্ভুত বন্দুক – Krummlauf যুদ্ধক্ষেত্রে উদ্ভাবনের এক বিচিত্র অধ্যায় | The strange gun with a curved barrel Krummlauf a bizarre chapter in battlefield innovation



কর্মফল অতীতের শক্তি ও বর্তমানের শিক্ষা | Karma is the power of the past and the lessons of the present








Comments

Popular posts from this blog

A girl was having bangla golpo

  একটি মেয়ের বিবাহিত জীবনে প্রচুর অশান্তি হচ্ছিল সে কোনো ভাবেই |  A girl was having a lot of trouble in her married life English convert scroll 👇 Married life পরিবর্তনের শুরু নিজেকে বদলে দেওয়া থেকেই : তার স্বামীকে মেনে নিতে পারছিল না,মনের মধ্যে এতোটাই রাগ জন্মেছিল যে সে তার স্বামীকে খুন পর্যন্ত করতে চাইছে।  একদিন সকালে সে তার মায়ের কাছে গিয়ে বললো- “আমি আমার স্বামীকে নিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি,আমি আর তার বাজে কথা মেনে নিতে পারছি না। আমি তাকে খুন করতে চাই,কিন্তু আমি ভয়‌ পাচ্ছি যে দেশের আইন আমাকে দায়ী করবে। তুমি কি এই বিষয়ে আমাকে সাহায্য করতে পারো মা..??” bangla golpo মা উত্তর দিলেন- “হ্যাঁ, আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি। তবে তার আগে কয়েকটি কাজ আছে যা তোমাকে করতে হবে।” মেয়ে জিজ্ঞাসা করলো- “কি কাজ মা..?? আমি তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য যে কোনো কাজ করতে প্রস্তুত আছি।” মা বললেন- “ঠিক আছে, তাহলে শোনো:- ১. তোমাকে প্রথমেই তার সাথে খুব ভালোভাবে শান্তিতে কিছুদিন থাকতে হবে,যাতে সে মারা যাওয়ার পর কেউ তোমাকে সন্দেহ করতে না পারে। ২. তার কাছে সুন্দরী এবং আকর্ষণীয়া দেখাব...

Mandra was sitting bangla golpo

Mandra was sitting quietly in a corner of the hospital's black chair. She suddenly fainted ||হাসপাতালের কালো চেয়ারের এক কোণে চুপচাপ বসেছিল মন্দ্রা হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়ায় বেশি কিছু ভাবনা চিন্তা না করেই সে বাবাকে সামনের হাসপাতালে নিয়ে এসেছে| খানিক আগে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারল বাবার মাথায় ক্লট জমেছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশন করাতে হবে| এদিকে দিন আনি দিন খাই পরিবার, তার টিউশনের দু হাজার টাকাও পরিবারের কাছে অনেক| ষাট হাজার টাকা... অঙ্কটা তাদের মতো পরিবারের জন্য অনেক| দিন দুয়েকের মধ্যে তো দূর, বছরখানেকের মধ্যেও জোগাড় করতে পারবে কিনা সন্দেহ! রিসেপশন ডেস্কে বসা গোলাপি ইউনিফর্ম পরা মহিলার কাছ থেকে টাকার অঙ্কটা শোনার পরপরই মন্দ্রার মনে হল মাথায় আকাশ ভেঙে পড়া বোধহয় একেই বলে| এত টাকা জোগাড় করার সামর্থ্য নেই তার, তবে কি বাবা আর প্রাণে বাঁচবে না? মা কেমন ছিল ভাল করে মনেও নেই তার, অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করতে না পেরে তাকে ফেলে পালিয়েছে| বাবাই খেয়ে না খেয়ে পক্ষী মাতার মতো বুকে আগলে রেখেছিল এতদিন| কিন্তু বাবাই যদি তারাদের দেশে চলে যায়, একলা কিভাবে বাঁচবে মন্দ্রা? কথাটা ...

Pride is terrible bangla golpo

  যার ভালোবাসা গভীর তার অভিমান ভয়ংকর | He whose love is deep his pride is terriblehoop English convert scroll 👇 মানুষকে কখনও একা কাঁদার সময় দিতে নেই জানেন! একবার কেউ একা কাঁদতে শিখে গেলে, তার আর কারও প্রয়োজন হয় না।  -আগে জানতাম না, তবে এখন জানি। মেয়েদের অভিমান ভালোবাসার চেয়েও ভয়ংকর।  -আংশিক ভুল জানেন আপনি।  -সঠিকটা তবে জানিয়ে দিন।  -যার ভালোবাসা যত গভীর, তার অভিমান তত ভয়ংকর।  -আপনি বলছেন যখন, মেনে নিলাম।  -আপনার ভালোবাসতে ইচ্ছে করে না জ্যোতিষ্ক?  -করে তো! কিন্তু জীবনের সাময়িক উদ্দেশ্য পূরণের স্বার্থে এমন কিছু ব্যক্তিগত ক্ষতি হয়ে গেছে, যা আমি চাইলেও ফেরাতে পারব না। আপনার গল্প বলুন ম্যাডাম। যাঁরা ভালোবাসতে জানেন, তাঁদের কাছে ভালোবাসার গল্প শুনতে ভালো লাগে।  -আমি আর কী বলব? যখন মন ভুল পথনির্দেশ দেয়, তখন সঠিক পথে হাঁটার জন্য নিজের মনের বিরুদ্ধে যেতে হয়। আমিও গেছি, এখন একরকম ভালোই আছি।  -সত্যিই ভালো আছেন? কতটা ভালো আছেন? জানতে ইচ্ছে করে।  -ঠিক জানি না। কী পেয়েছি, কতটা হারিয়েছি, সেই হিসেব রাখি না। আজকাল নিজের ভালো থাকার চেয়েও, অন্যের ভাল...