Skip to main content

The worlds largest overhead reservoir is the Tala Tank in Kolkata

 পৃথিবীর বৃহত্তম ওভারহেড রিজার্ভার হলো কলকাতার ‘টালা ট্যাঙ্ক’।The world's largest overhead reservoir is the 'Tala Tank' in Kolkata.





Taka Tank



বিস্ময়কর টালা ট্যাঙ্ক শহরের প্রাণের আধার

কলকাতা শুধু সংস্কৃতি-সাহিত্য বা রাজনৈতিক ইতিহাসে সমৃদ্ধ নয়—এ শহরের বুকে লুকিয়ে আছে অসংখ্য প্রকৌশল-কীর্তি। তারই এক অমলিন দৃষ্টান্ত ‘টালা ট্যাঙ্ক’—যা শুধু ভারতেই নয়, সমগ্র পৃথিবীর বৃহত্তম ওভারহেড ওয়াটার রিজার্ভার হিসেবে স্বীকৃত। বিস্ময়কর নির্মাণশৈলী, প্রায় শতাধিক বছরের ইতিহাস, আর লাখ লাখ মানুষের তৃষ্ণা মেটানোর নিরলস দায়িত্ব—সব মিলিয়ে টালা ট্যাঙ্ক কলকাতার গর্ব, বাঙালির অহংকার।

কলকাতার জল সমস্যার শুরু

১৭১৭ সালে মোঘল সম্রাট ফারুকশিয়ারের কাছ থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যখন ৩৮টি গ্রাম অধিগ্রহণ করল, তার মধ্যেই জন্ম নিল কলকাতার ভবিষ্যৎ। কিন্তু ধীরে ধীরে শহর বিস্তার লাভের সাথে সাথে সবচেয়ে বড় সঙ্কট দেখা দিল – বিশুদ্ধ পানীয় জল

তখন পরিষ্কার জল পাওয়ার উৎস বলতে ছিল কেবল পুকুর।
হেদুয়া, ভবানীপুর ও ওয়েলিংটনের বড় বড় পুকুর থেকে জল তুলে নাগরিকদের সরবরাহ করা হতো। কিন্তু জনসংখ্যা যত বাড়ল, প্রয়োজনীয় জলের পরিমাণ পূরণ করা ততই অসম্ভব হয়ে উঠল।

একটি স্বপ্নের সূচনা

১৯০১ সালে শহরের তৎকালীন ইঞ্জিনিয়ার মিস্টার ডেভেরাল বড়সড় একটি ট্যাঙ্ক নির্মাণের প্রস্তাব দেন।
পরের বছর কলকাতা কর্পোরেশন সেই পরিকল্পনা অনুমোদন করে।

১৯০৩ সালে ডব্লিউ বি ম্যাককাবে পরিকল্পনার আরও উন্নয়ন করেন এবং তখনকার হিসাব অনুযায়ী বিশাল প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়ায় ৬৯ লক্ষ ১৭ হাজার ৮৭৪ টাকা—যা সেই সময়ের জন্য ছিল অবিশ্বাস্য পরিমাণ।

জমি দিলেন একজন দানবীর

ট্যাঙ্ক কোথায় তৈরি হবে?
যেখানে আজ টালা ট্যাঙ্ক দাঁড়িয়ে—সেখানে এক সময় ছিল বিস্তীর্ণ জলাভূমি ও পুকুর। সেগুলি ভরাট করে তৈরি করা হয় শক্ত ভিত্তি। আর সেই ৪৮২ একর জমি সমাজহিতৈষী মহান মানুষ বাবু খেলাত চন্দ্র ঘোষ বিনামূল্যে দান করেছিলেন।

বলতেই হয়—কলকাতা তার জল পেয়েছে একজন দানবীরের উদারতায়।

শিলান্যাস থেকে উদ্বোধন

১৯০৯: তৎকালীন গভর্নর স্যার এডওয়ার্ড বেকার শিলান্যাস করেন


১৯১১: ট্যাঙ্ক উদ্বোধন এবং শহরে জল সরবরাহ শুরু


আজও সেটাই শহরের প্রধান জল সরবরাহের হৃদপিণ্ড হিসেবে কাজ করছে।

অবিশ্বাস্য স্থাপত্য

টালা ট্যাঙ্ককে অন্য সবকিছুর থেকে আলাদা করে তার আর্কিটেকচারাল জিনিয়াস

✔ ট্যাঙ্কের আকার — ৩২১ ফুট × ৩২১ ফুট
✔ ক্ষেত্রফল — ১ লক্ষ ৩ হাজার ৪১ স্কোয়ারফিট
✔ উচ্চতা — ১০ তলা বাড়ির সমান প্রায়
✔ ধারণক্ষমতা — ৯০ লক্ষ গ্যালন (প্রায় ৪ কোটি লিটার) জল
✔ জলের গভীরতা — ১৬ ফুট পর্যন্ত
✔ কম্পার্টমেন্ট — ৪টি, যাতে একটি পরিষ্কার করার সময়ও অন্যগুলিতে জল সরবরাহ বন্ধ না হয়

এক কথায়, এর ভিতর অনায়াসে একটি সম্পূর্ণ ফুটবল স্টেডিয়াম ঢুকে যেতে পারে!





টাইটানিকের লোহা, কিন্তু বেশি শক্তিশালী কাঠামো

টালা ট্যাঙ্কের নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছিল টাইটানিক জাহাজে ব্যবহৃত একই মানের স্টিল
স্টিলের কাজ করেছে ইংল্যান্ডের Clittenson & Co.

কিন্তু বিস্ময় এখানেই শেষ নয়—

 পুরো ১০ তলা ট্যাঙ্কটি স্ক্রু-নাট ছাড়াই কাঠের পাটাতনের উপর দাঁড়িয়ে আছে!

প্রথমে ছাদ ছিল চুনসুরকির। পরবর্তীতে ১৪ ইঞ্চি পুরু কংক্রিটের ছাদ যোগ করা হয়, তবুও তার স্থায়িত্বে কোথাও ছেদ পড়েনি।

নির্মাণে যুক্ত ছিলেন:

টি সি মুখার্জি এন্ড কোম্পানি — ভিত্তিকাজ


মার্টিন এন্ড কোম্পানি — কংক্রিটের ফাউন্ডেশন


আরাকন এন্ড কোম্পানিকালীশঙ্কর মিত্তির — ছাদ নির্মাণ


প্রকৌশলে কলকাতার স্বনির্ভর অধ্যায়েরও এটি এক উজ্জ্বল প্রমাণ।

যুদ্ধ-বিপর্যয়েও অটল

টালা ট্যাঙ্ক যেন শক্তিমত্তার জীবন্ত প্রতীক।

✔ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানিরা বোমা ফেলেছিল →
শুধু ৯টি ছিদ্র, কিন্তু ট্যাঙ্ক অটুট!

✔ ১৯৬২ ও ১৯৭১—দুটি যুদ্ধেই
চীন ও পাকিস্তানের প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিল এই ট্যাঙ্ক
কারণ ট্যাঙ্ক ধ্বংস হলেই কলকাতার প্রাণধারা থেমে যাবে।

✔ একাধিক শক্তিশালী ভূমিকম্পেও
এক খণ্ডও ভাঙেনি এর

যেন লোহার দানব, মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে।


Taka Tank


কলকাতার প্রতিটি শ্বাসে টালা ট্যাঙ্ক

দমদম থেকে দক্ষিণ কলকাতা—ওয়াটার পাইপের বিস্তীর্ণ নেটওয়ার্ক যুক্ত এই ট্যাঙ্কের সঙ্গে।
আজও প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ ঘরে জল পায় এই ট্যাঙ্কের শক্তিবলে

বাড়ির রান্নাঘর, কলেজের ক্যান্টিন, হাসপাতালের জরুরি ওয়ার্ড—সব জায়গার জল আসে টালা ট্যাঙ্কের বুকে সঞ্চিত বিশুদ্ধতার স্রোত থেকে।

এ যেন জল নয়—জীবনের স্পন্দন

ইতিহাস, প্রযুক্তি এবং মানবিক দায়িত্বের বিরল সমন্বয়

টালা ট্যাঙ্ক শুধু প্রকৌশল-চমৎকার নয়; এটি ইতিহাসের নীরব সাক্ষী।

এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে সে দেখেছে:

▪ কলকাতার গড়ে ওঠা
▪ মেট্রো রেল নামা
▪ শিল্পায়ন, আধুনিকতা, যুদ্ধ, বিপর্যয়
▪ এবং সবশেষে নাগরিক জীবনের পরিণতি

এত প্রতিকূলতা পেরিয়েও এখনো দাঁড়িয়ে আছে অম্লান গৌরবে—শুধু দাঁড়িয়ে নয়, মানুষের জীবন বাঁচিয়ে চলেছে প্রতিদিন।

শেষ কথায়

একটা শহর গড়ে ওঠে তার মানুষের স্বপ্ন, ঘাম আর পরিশ্রমের উপর।
আর সেই শহর বাঁচিয়ে রাখে জল

টালা ট্যাঙ্ক তাই শুধু একটি বিশালাকার স্ট্রাকচার নয়—
এটি কলকাতার আত্মা,
এটি বাঙালির গর্ব,
এটি মানব সভ্যতার জন্য এক অসাধারণ উদাহরণ

আজও আকাশের দিকে তাকালে দেখা যায়—
ইতিহাসের সেই দৈত্যাকৃতি জলাধার
গর্বভরে জানিয়ে দেয়—


👉 “আমি আছি। জল আছে। জীবন আছে।”



More suggest page 

স্ট্যান লারকিন মানব হৃদপিণ্ড ছাড়াই ৫৫৫ দিনের অবিশ্বাস্য জীবন | Stan Larkin's incredible life of 555 days without a human heart




মঙ্গল গ্রহের বিশাল ক্ষতচিহ্ন — ভ্যালেস মেরিনারিস || The giant scar on Mars — Valles Marineris


অভিজ্ঞতার মহিমা এক অদ্ভুত দেশের অমূল্য শিক্ষা | The glory of experience is the invaluable lesson of a strange country


Comments

Popular posts from this blog

A girl was having bangla golpo

  একটি মেয়ের বিবাহিত জীবনে প্রচুর অশান্তি হচ্ছিল সে কোনো ভাবেই |  A girl was having a lot of trouble in her married life English convert scroll 👇 Married life পরিবর্তনের শুরু নিজেকে বদলে দেওয়া থেকেই : তার স্বামীকে মেনে নিতে পারছিল না,মনের মধ্যে এতোটাই রাগ জন্মেছিল যে সে তার স্বামীকে খুন পর্যন্ত করতে চাইছে।  একদিন সকালে সে তার মায়ের কাছে গিয়ে বললো- “আমি আমার স্বামীকে নিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি,আমি আর তার বাজে কথা মেনে নিতে পারছি না। আমি তাকে খুন করতে চাই,কিন্তু আমি ভয়‌ পাচ্ছি যে দেশের আইন আমাকে দায়ী করবে। তুমি কি এই বিষয়ে আমাকে সাহায্য করতে পারো মা..??” bangla golpo মা উত্তর দিলেন- “হ্যাঁ, আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি। তবে তার আগে কয়েকটি কাজ আছে যা তোমাকে করতে হবে।” মেয়ে জিজ্ঞাসা করলো- “কি কাজ মা..?? আমি তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য যে কোনো কাজ করতে প্রস্তুত আছি।” মা বললেন- “ঠিক আছে, তাহলে শোনো:- ১. তোমাকে প্রথমেই তার সাথে খুব ভালোভাবে শান্তিতে কিছুদিন থাকতে হবে,যাতে সে মারা যাওয়ার পর কেউ তোমাকে সন্দেহ করতে না পারে। ২. তার কাছে সুন্দরী এবং আকর্ষণীয়া দেখাব...

Mandra was sitting bangla golpo

Mandra was sitting quietly in a corner of the hospital's black chair. She suddenly fainted ||হাসপাতালের কালো চেয়ারের এক কোণে চুপচাপ বসেছিল মন্দ্রা হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়ায় বেশি কিছু ভাবনা চিন্তা না করেই সে বাবাকে সামনের হাসপাতালে নিয়ে এসেছে| খানিক আগে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারল বাবার মাথায় ক্লট জমেছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশন করাতে হবে| এদিকে দিন আনি দিন খাই পরিবার, তার টিউশনের দু হাজার টাকাও পরিবারের কাছে অনেক| ষাট হাজার টাকা... অঙ্কটা তাদের মতো পরিবারের জন্য অনেক| দিন দুয়েকের মধ্যে তো দূর, বছরখানেকের মধ্যেও জোগাড় করতে পারবে কিনা সন্দেহ! রিসেপশন ডেস্কে বসা গোলাপি ইউনিফর্ম পরা মহিলার কাছ থেকে টাকার অঙ্কটা শোনার পরপরই মন্দ্রার মনে হল মাথায় আকাশ ভেঙে পড়া বোধহয় একেই বলে| এত টাকা জোগাড় করার সামর্থ্য নেই তার, তবে কি বাবা আর প্রাণে বাঁচবে না? মা কেমন ছিল ভাল করে মনেও নেই তার, অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করতে না পেরে তাকে ফেলে পালিয়েছে| বাবাই খেয়ে না খেয়ে পক্ষী মাতার মতো বুকে আগলে রেখেছিল এতদিন| কিন্তু বাবাই যদি তারাদের দেশে চলে যায়, একলা কিভাবে বাঁচবে মন্দ্রা? কথাটা ...

Pride is terrible bangla golpo

  যার ভালোবাসা গভীর তার অভিমান ভয়ংকর | He whose love is deep his pride is terriblehoop English convert scroll 👇 মানুষকে কখনও একা কাঁদার সময় দিতে নেই জানেন! একবার কেউ একা কাঁদতে শিখে গেলে, তার আর কারও প্রয়োজন হয় না।  -আগে জানতাম না, তবে এখন জানি। মেয়েদের অভিমান ভালোবাসার চেয়েও ভয়ংকর।  -আংশিক ভুল জানেন আপনি।  -সঠিকটা তবে জানিয়ে দিন।  -যার ভালোবাসা যত গভীর, তার অভিমান তত ভয়ংকর।  -আপনি বলছেন যখন, মেনে নিলাম।  -আপনার ভালোবাসতে ইচ্ছে করে না জ্যোতিষ্ক?  -করে তো! কিন্তু জীবনের সাময়িক উদ্দেশ্য পূরণের স্বার্থে এমন কিছু ব্যক্তিগত ক্ষতি হয়ে গেছে, যা আমি চাইলেও ফেরাতে পারব না। আপনার গল্প বলুন ম্যাডাম। যাঁরা ভালোবাসতে জানেন, তাঁদের কাছে ভালোবাসার গল্প শুনতে ভালো লাগে।  -আমি আর কী বলব? যখন মন ভুল পথনির্দেশ দেয়, তখন সঠিক পথে হাঁটার জন্য নিজের মনের বিরুদ্ধে যেতে হয়। আমিও গেছি, এখন একরকম ভালোই আছি।  -সত্যিই ভালো আছেন? কতটা ভালো আছেন? জানতে ইচ্ছে করে।  -ঠিক জানি না। কী পেয়েছি, কতটা হারিয়েছি, সেই হিসেব রাখি না। আজকাল নিজের ভালো থাকার চেয়েও, অন্যের ভাল...